শবে মেরাজের মহিমান্বিত রজনী আজ
ঢাকা: আজ শনিবার ১৪৩৬ হিজরির ২৭ রজবের রাত। অসামান্য পূণ্যে ঘেরা এক রজনী। এই রাত মহাপবিত্র লাইলাতুল মেরাজের।
মুসলিম জাহানের মহামানব হযরত মুহাম্মদের (সা.) নবুয়তের একাদশতম বর্ষের ২৬ রজব দিবাগত রাতে হযরত জিবরাইল (আ.) এর সঙ্গে পবিত্র কাবা হতে বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপর সিদরাতুল মুনতাহা, অতঃপর ৭০ হাজার নূরের পর্দা পার হয়ে সশরীরে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং মুসলমান জাতির জন্য পাঁচওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। এসব কারণেই আজকের রাতটি সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে একটি মহিমান্বিত রাত।
মেরাজের ঘটনা সমগ্র মানব জাতির জন্য বিস্ময়কর ঘটনা। এঘটনা কুরআন, হাদিসে এবং ইতিহাস দ্বারা সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এর বর্ণনার মাধ্যমে ঘটনাটির ওপর বিশ্বাস রাখার কথা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এছাড়াও অসংখ্য সহীহ হাদিসে এঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করা আছে।
‘লাইলাতুল মেরাজ’ বলার কারণ: আমাদের দেশে ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা এ রাতকে শবে মেরাজ বা লাইতুল মেরাজের রাত বলে থাকে। কুরআনের পরিভাষায় ‘ইসরা’ শব্দ দ্বারা মেরাজের ঘটনার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘ইসরা’ ধাতু থেকে ‘আসরা’ শব্দটি উৎসারিত। যার আভিধানিক অর্থ হলো- রাতে নিয়ে যাওয়া। আর সফরটি রাতের একাংশে সম্পাদিত হয়েছে বলে ঘটনাকে ‘ইসরা’ বলা হয়। তবে হাদিসের পরিভাষায় ‘উরজুন’ শব্দ দ্বারা মেরাজের ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। ‘উরজুন’ থেকে মেরাজ শব্দ উদগত হয়েছে যার শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি। আবার ‘লাইলাতুল’ এর ফারসি ভাষায় সমার্থক শব্দ ‘শব’ আর তাই শব-ই-মেরাজও বলা হয়ে থাকে।
প্রেক্ষাপট ও ঘটনা প্রবাহ: মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) তায়েফ সফরের পর কাফিরদের সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতনে মুসলমানরা যখন অসহায়। ঠিক তখনই নবুওয়াতের একাদশ বছর মহান আল্লাহ তাআলা তাকে মেরাজের এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা অনুযায়ী মেরাজের ঘটনাটি তুলে ধরা হলো- ‘একদা রাতে রাসূল (সা.) হজরত উম্মে হানি (রা.) এর ঘরে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় বিস্ময়করভাবে ঘরের ছাদ ফেটে যায় এবং ছাদপথে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) সেই ঘরে প্রবেশ করেন। জিবরাইল রাসূলকে (সা.) ঘুম থেকে জেগে তুলে কাবা শরিফে নিয়ে যান। সেখানে ‘জমজম’ কূপের পাশে তার ব্ক্ষ বিদারণ করে পবিত্র জমজম পানি দ্বারা ধৌত করেন। অতঃপর একটি বাহন আনা হয়। রাসূল (সা.) সেই বাহনে আরোহণ করেন। সেই অলৌকিক বাহন বা ‘বোরাক’ দৃষ্টিরগতিতে চলতে থাকে। যাত্রাপথে তিনি মদিনা, তুর পর্বত, ফিলিস্তিনির ‘বায়তু লাহাম’বা ‘বেথেল হাম’ অতিক্রম করেন। জায়গাগুলো হযরত জিবরাইল (আ.) পরিচয় করে দেন ও প্রতিটি স্থানে রাসুল (সা.) দু’রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করেন। এরপর বায়তুল মোকাদ্দাসে পৌঁছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইমাম হয়ে পূর্ববর্তী সব নবী-রাসূলকে নিয়ে দু’রাকাত নামাজ পড়েন। সেখান থেকে ইমামতির পর জিবরাইলের (আ.) এর সঙ্গে বোরাকের মাধ্যমে তিনি ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেন। মুহূর্তের মধ্যেই প্রথম আসমানের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হয়ে প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এর সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। এভাবে সাত আসমানে অবস্থানকারী অন্য নবী-রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সালাম বিনিময় করেন। এসময় প্রত্যেকেই বিশ্বনবীকে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আকাশের পর রাসূল (সা.) ‘সিদরাদুল মুনতাহা’ পর্যন্ত পৌঁছেন। তখন জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘আমার যাত্রাপথ এখানেই শেষ। আপনার সঙ্গ দেয়ার সাধ্য আর আমার নেই।’
অতঃপর রাসূল (সা.) ‘রফরফ’ নামক বাহনে চড়ে আল্লাহর কাছে চলে যান এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। সেখানেই রাসূল (সা.) মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে একান্ত আলাপের সৌভাগ্য লাভ করেন। সব শেষে এখান থেকে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য পাঁচওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন।