ঈদকে ঘিরে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদুল ফিতরের টানা পাঁচদিনের ছুটিকে ঘিরে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা ভাসছেন ছুটির আমেজে।
রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা, উত্তরার দিয়াবাড়ির নৈসর্গিক সৌন্দর্য, স্বপ্নের মেট্রোরেল ভ্রমণ, হাতিলঝিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য, সবুজের সমারোহ ও পাখির কলতানে মুখর বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিশুপার্কগুলো নানা বয়সী মানুষের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। আজ রোববার রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। খবর বাসস’র।
রাজধানীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান জাতীয় চিড়িয়াখানা। বাঘ, সিংহ, হরিণ, ময়ূর, বানর, সাপ, নানারকম পাখি ও জলহস্তীসহ বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
উত্তরা থেকে পরিবার নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন লতিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে, চিড়িয়াখানার এরিয়া অনেক বড় হওয়ায় সবটুকু ঘুরে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। পা ব্যথা করছে। প্রচন্ড রোদ-গরমে শিশু বাচ্চাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই যতটুকু সম্ভব ঘুরে দেখালাম। চিড়িয়াখানার পরিবেশটা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, সাধারণত শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন চিড়িয়াখানায় ২০ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। আজ ঈদের পর দিন- সেই হিসেবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরো জানান, আমরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। কাল ও পরশু দর্শনার্থীর চাপ আরও বেশি হবে। এজন্য, বিশেষ কারণ ছাড়া কাউকে ছুটি দেয়া হয়নি।
অপরদিকে, হাতিরঝিল বিনোদন কেন্দ্রটি হাজার হাজার দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। বিকেল থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে এলাকাটি।
জানা গেছে, রাজধানীতে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়া মেলে হাতিরঝিলে। হাতিরঝিলের গুলশান, এফডিসি ও রামপুরা প্রান্ত থেকে নৌকা বা স্পিড বোটে চড়ে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
ঈদুল ফিতরকে ঘিরে হাতির ঝিলের বিনোদন কেন্দ্রটি দিনে ও রাতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে।
নগরবাসীর স্বপ্নের মেট্রোর ভ্রমণ করতে দর্শনার্থীতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। গতকালও এরকম ভিড় লক্ষ্য করা যায় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে এসেছেন মেট্রোরেলে ভ্রমন সহ ঈদ আনন্দে উপভোগ করতে। উত্তরার উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন এবং আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- রেলস্টেশনের গেট খোলার আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন বয়সের উৎসাহী রেলযাত্রীরা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়বেন, সে কারণে তাদের মনের আনন্দটা ছিল একটু বেশি। স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে পেরে চলছিল নানা আলোচনা। দেশের প্রথম এই আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় তারা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পেরে খুব খুশি। কৌতূহল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন স্টেশনের ভেতরে এবং বাহিরে। সতর্কতার সঙ্গে সবাই মেনে চলছেন নির্দেশিকা। সে কারণে অনেক যাত্রী মেট্রোরেল ভ্রমণ করতে পেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঈদের শুভেচ্ছাসহ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
গাজীপুর থেকে প্রথমবারের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে এসেছেন আতাউর রহমান। মেট্রোরেল নিয়ে তাদের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে শুধু টিভিতে দেখে আসছি, কিন্তু আসা হয়নি। আজ সকালে মেট্রোরেলে চড়তে পেরে ভালো লেগেছে। মেট্রোরেল আসলেই অনেক সুন্দর, পরিস্কার ও আধুনিক।
এ জন্য সরকারকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তুরাগ থানার ওসি অপারেশন শেখ মফিজুল ইসলাম জানান, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। দর্শনার্থীদের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। সে কারণে ট্রেন যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা মাথায় রেখে পুলিশী নিরাপত্তা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে কোন ধরনের অসুবিধা নেই। আমাদের থানার মোবাইল টিম, টহল টিম ও হোন্ডা মোবাইল টিমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *