চাঁদাবাজি: দুই সার্জেন্টসহ ১০ পুলিশ প্রত্যাহার
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে গণপরিবহন ও মোটরসাইকেল। গণপরিবহনের মধ্যে শহর ও শহরতলি রুটে চলাচলকারী প্রায় ১৫ হাজার বাস রয়েছে। ঢাকায় চলাচলকারী ৩ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশাও প্রতিনিয়ত কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলোও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবলরা যেখানে সেখানে যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবলদের টার্গেট এখন ছোট পিকআপ গাড়ি। বাসা পরিবর্তন ও বড় ধরনের কেনাকাটার জন্য মালামাল পরিবহন করতে ছোট পিকআপ গাড়ি ব্যবহার হয়। এসব ছোট পিকআপ গাড়ির চালকদের বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই। এই সুযোগটি কাজে লাগায় সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবলরা। সড়কের মোড়ে এসব পিকআপ গাড়ি দেখলেই সার্জেন্ট ও কনস্টেবলরা আটক করে ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। আবার রেন্ট-এ-কারের মাইক্রোবাস তো হরহামেশাই চাঁদাবাজি শিকার হচ্ছে। রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সার্জেন্টরা মাসিক চুক্তিভিক্তিক চাঁদা নেয়।
অ্যাপস ভিত্তিক মোটরসাইকেলগুলোও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রী নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলগুলোতেও প্রায়ই সার্জেন্টরা গাড়ির কাগজ তল্লাশি করে। কাগজে ত্রুটি থাকলে ২০০ টাকা দিয়ে রক্ষা। আবার অযথা মোটরসাইকেল থামিয়ে মামলা দেওয়ারও ঘটনা রয়েছে। এ রকম সার্জেন্টদের মামলার প্রতিবাদে গত বছর দুই পাঠাও চালক নিজের বাইক সার্জেন্টদের সামনে জ্বালিয়ে দেন।
এ রকম চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দুই সার্জেন্ট এবং এক এএসআইসহ ১০ জনকে সম্প্রতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরা হলেন: শাহবাগ ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট জাফর ইমাম, ওয়ারী জোনের এক সার্জেন্ট ও এক এএসআই এবং বাকিরা কনস্টেবল। এরা রাজধানীর শাহবাগ, টিকাটুলি ও স্বামীবাগ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদাবাজি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারি: এদিকে দায়িত্বরত অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশ যেন কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে সোমবার চিঠি পাঠিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়, দায়িত্ব পালনকালে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগ এবং প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যা ইউনিটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। ট্রাফিক বিভাগের যেসব সদস্য বিভিন্ন ইন্টারসেকশনে ডিউটিতে থাকেন, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না তা নিয়মিত কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।
রাজধানী জুড়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি: ঈদ বা কোনো উত্সবে চাঁদা আদায়ে পুলিশ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার টেম্পো ও হিউম্যান হলার চলাচল করে। স্থানভেদে যাত্রী পরিবহনের জন্য এসব যান থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে চাঁদা তেলা হয়। সবুজবাগ-গুলিস্তান হিউম্যান হলার থেকে ট্রাফিকের এসি রাতে সার্জেন্ট ও ট্রাফিক সদস্যদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।