খুলনায় কনস্টেবল থেকে ওসি সবাই আসামি
পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণের মামলা
খুলনা প্রতিনিধি : খুলনা পিবিআই-এর ইনস্পেকটর মঞ্জুরুল আহসান মাসুদ, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের এসআই জাহাঙ্গীর আলম, কেএমপি পুলিশের এএসআই মোখলেছুর রহমান, খুলনা জিআরপি থানার সাবেক ওসি ওসমান গণি এবং আড়ংঘাটা থানার কনস্টেবল (কম্পিউটার অপারেটর) স্বদেশ বালা-সবাই ধর্ষণ মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানা, আদালত ও খানজাহান আলী থানায় পৃথক মামলা হয়েছে। গত এক বছরেই খুলনায় ধর্ষণের সঙ্গে পুলিশের কনস্টেবল থেকে ওসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা আসামি হওয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনায় পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণ মামলা হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। পুলিশ সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ড বিব্রত করছে সরকারকে-এমন মন্তব্য আওয়ামী লীগের। পুলিশকে জনগণের বন্ধু হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার ঘটনাগুলো পৃথক ২/৩ সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এদিকে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হওয়ার আসামি আটক হলেও তারা জামিনে রয়েছেন। মামলাগুলোর তদন্তে রয়েছে ধীরগতি। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না মেলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ জুন বিকালে কনস্টেবল স্বদেশকে আড়ংঘাটা থানা পুলিশ আটক করে খানজাহান আলী থানায় হস্তান্তর করে। তার বিরুদ্ধে নগরীর শিরোমনি এলাকার এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। স্বদেশ নিজের পরিচয় ও ধর্ম গোপন রেখে ওই নারীর সঙ্গে ৫ বছর সম্পর্ক করে আসছিল। ১৬ জুন নারীর বাসায় কেউ না থাকায় তাকে ধর্ষণ করা হয়। এদিকে ২২ মে খুলনা জিআরপি থানার সাবেক ওসি ওসমান গণিকে ধর্ষণ মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন মহানগর দায়রা জজ। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। ওই নারী নিজেই আদালতে এ অভিযোগ করেছিলেন। নগরীতে আলোচিত কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় খুলনা পিবিআই-এর ইনস্পেকটর মঞ্জুরুল আহসান মাসুদকে ৮ জুন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক কারাগারে পাঠিয়েছেন। কেএমপি পুলিশের সূত্র জানায়, ১৫ মে নগরীর ছোট মির্জাপুরের একটি অফিস কক্ষে পিবিআই ইনস্পেকটর মঞ্জুরুল আহসান মাসুদের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই ছাত্রীর ছবি ফেসবুকে অন্য একটি আইডি থেকে প্রচার করা হচ্ছিল। এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্য পিবিআই ইনস্পেকটরের সাহায্য চান ওই ছাত্রী। ইনস্পেকটর সাহায্যের নামে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ওই অফিসে নিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনার পর থেকে ইনস্পেকটর মাসুদ পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আদালতে জামিন নিতে গেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নগরীর হাদীস পার্ক সংলগ্ন সুন্দরবন আবাসিক হোটেলে বাগেরহাট থেকে খুলনায় চিকিৎসা নিতে আসা মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে কেএমপির গোয়েন্দা বিভাগের এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। একই বছরের ১৪ মে নগরীর পিটিআই মোড়ে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত থেকে আসামি তরুণী ধর্ষণের শিকার হন।
এ ঘটনায় ১৭ মে খুলনা সদর থানায় ভিকটিম কেএমপি পুলিশের এএসআই মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ মোখলেছুরকে আটক করলেও বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এক বিবৃতিতে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা পুলিশকে জনগণের বন্ধু হওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানান।
কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এসএম ফজলুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। ইতোমধ্যে সব পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা আটকও হয়েছেন। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।