আনন্দের যাত্রা, যানজট নেই সড়কে, যাত্রীদের চাপ রেল স্টেশন ও সদরঘাটে, ঢিলেঢালা বাস টার্মিনাল

ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী| ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন গতকাল শনিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ ছিল| তবে গতকালও ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি| দু-একটি ট্রেন ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট দেরি করে ছাড়লেও যাত্রীরা আনন্দেই ঈদযাত্রা করেছেন| গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি| যাত্রীরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই এসি, নন-এসি বাসের টিকিট কিনতে পারছেন| টিকিট কাউন্টারের বিক্রেতারা জানান, সকালে ভিড় কম থাকলেও দুপুরের দিকে কিছুটা বেড়েছে| মহাখালী বাস টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের চাপ কম দেখা গেছে| যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ| যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদের বাস কাউন্টারগুলোতেও যাত্রী উপস্হিতি কম ছিল| সদরঘাটে বিকালের পর যাত্রীদের চাপ বাড়ে| লঞ্চগুলো যাত্রী বোঝাই করে ঘাট ছেড়ে যায়|

ট্রেনে যাত্রী?তে ঠাসাঠাসি, ছাড়ছে সময়?মতো

গতকাল রাজধানী থেকে অধিকাংশ ট্রেন সময়মতো ছেড়েছে| ত?বে প্রতিটি ট্রে?ন যাত্রীতে ঠাসা| যাত্রীর চাপে কিছুটা ভোগান্িত হলেও প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দে ছাপিয়ে যাচ্ছে তা| গতকাল শনিবার সকাল থেকে বেলা সা?ড়ে ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়|

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এখন পর্যন্ত বড় কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি| অধিকাংশ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে| তিনি জানান, গতকাল থেকে ঈদযাত্রায় ৩৯ জোড়া ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে| আর সব মিলিয়ে ট্রেন আসা-যাওয়া করেছে ১২২টি| অতিরিক্ত যাত্রীর বিষ?য়ে স্টেশন ম্যানেজার ব?লেন, ঈদে যাত্রীর চাপ বে?ড়ে যায়| এটা বি?বেচনায় নি?য়ে অতিরিক্ত ব?গি যোগ করা হয়েছে| আর প্রতিটি ট্রে?নে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ টি?কিট বি?ক্রি করা হ?চ্ছে ‘স্ট্যান্ডিং’ যাত্রীদের জন্য|

টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের লোকাল বাসই ভরসা

স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কয়েক দিন ধরে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন ঢাকার বাসিন্দারা| গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলীতে দেখা গেছে ঘরমুখী মানুষের চঞ্চলতা| দুই হাতে ব্যাগ নিয়ে নির্দিষ্ট বাসের কাউন্টার খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনেকে| তবে দূরপাল্লার যাত্রীর চাপ কম দেখা গেছে| ঢাকার পাশের জেলাগুলোর যাত্রী বেশি দেখা গেছে|

গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমবঙ্গের সব বাস ছেড়ে যায়| অনেকে গতকাল আধা বেলা অফিস করে পরিবার নিয়ে ছোটেন গাবতলীতে| তবে টিকিট-প্রাপ্তরা নির্বিঘ্নে বাসে উঠতে পারলেও বিড়ম্বনায় পড়েন টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীরা| যারা আগে টিকিট কাটেননি বা টিকিট পাননি, তাদের একমাত্র ভরসা এখন লোকাল বাস| এই বাসগুলোতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়াও| তবে সন্ধ্যা থেকে আবার চাপ বাড়ে কাউন্টারগুলোতে|

ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলের দখলে ফেরি

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঈদে ঘরমুখী যাত্রায় বছরখানেক ধরে বেড়েছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার| ঈদের ছুটিতে অসংখ্য যাত্রী নিজস্ব বাহন মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটছেন বাড়ির উদ্দেশে|

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেতে-ফেরিতে একসময় যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাসের আধিক্য দেখা গেলেও ইদানীং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা| মোটরসাইকেলের চাপে ফেরিতে অন্যান্য যানবাহন উঠতে সমস্যা হচ্ছিল| গতকাল দুপুরে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে শুধু মোটরসাইকেল আরোহীদের নিয়েই কেটাইপ ফেরি কুঞ্জলতা বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে|

বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ফেরিতেই অর্ধেক জায়গা মোটরসাইকেল আরোহীদের দখলে| গতকাল শনিবার শিমুলিয়া থেকে শুধু মোটরসাইকেল নিয়েই একটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে আসে| প্রায় ১ হাজার মোটরবাইক ছিল ফেরিতে| দুপুরে ক্যামেলিয়া নামের ফেরিতে মাত্র ছয়-সাতটি গাড়ি পার হয়েছে| আর ফেরির বাকি অংশ ছিল মোটরবাইকের দখলে|

যানজট নেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ থাকলেও গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক গতকাল ফাঁকা ছিল| কোনো মহাসড়কে ছিল না যানজট| গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চিত্র ছিল এমনই|

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নেই

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সংবাদদাতা জানান, ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলেও হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের ব্যাপক তত্পরতার ফলে এ বছর মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত কোনো যানজট ছিল না, যার ফলে কোনো প্রকার ভোগান্িত ছাড়াই পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষ বাড়ি যেতে পারছেন যথাসময়ে| হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি স্পেশাল পেট্রোল টিম ছাড়াও ৫৬টি সাধারণ পেট্রোল টিম, ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম ও দুটি গোয়েন্দা টিম কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত|

সদরঘাটে বেড়েছে যাত্রীর চাপ

সদরঘাটে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ না থাকলেও শেষ বিকেলে ঘাটে ভিড় করেন যাত্রীরা| লঞ্চমালিকেরা বলছেন, গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে| সন্ধ্যায় ইফতারের পর চাপ আরো বাড়ে| লঞ্চঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘাটে লঞ্চ ভিড়েছে ১০০টি| এর মধ্যে ছেড়ে গেছে ৭৩টি| কিছুক্ষণ পরপরই লঞ্চমালিকদের বাড়তি যাত্রী না নিতে এবং সময়মতো ছেড়ে যেতে সতর্ক করা হচ্ছে| ছাদে যাত্রী নেওয়া হলে জরিমানার বিষয়েও হুঁশিয়ার করা হচ্ছে লঞ্চমালিকদের|

সদরঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর টি আই হুমায়ুন বলেন, যে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে| আমাদের মন্ত্রণালয়ের টিমও এখানে কাজ করছে, তারা লঞ্চগুলো ঘুরে দেখছে| অনিয়ম হলে ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *