এনায়েত উল্যাহর সম্পদের পাহাড় : নজরদারিতে দুদক
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তার রয়েছে সম্পদের পাহাড়। নামে-বেনামে আছে ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দেওয়া হিসাব থেকে এই সম্পদের তথ্য মিলেছে। তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, সম্পদের হিসাবে যে দাম দেখানো হয়েছে, তা বর্তমান বাজারদরের চেয়ে অনেক কম।
জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝিতে এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি জমা পড়ে। তাতে বলা হয়, রাজধানীর উপকণ্ঠের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৫ হাজার বাস থেকে প্রতিদিন এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন এনায়েত উল্যাহ। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। এই পর্যায়ে এনায়েত উল্যাহ, তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চাশমে জাহান আলাদাভাবে সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দেন। এখন ওই সম্পদের উৎস যাচাই-বাছাই চলছে। দুদক সূত্র জানায়, সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেলে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ মিললে তাদের নেওয়া হবে আইনের আওতায়। এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক নূরুল হুদা। অনুসন্ধান তদারক করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। জানা যায়, এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের সম্পদের উৎস হিসেবে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তানজিল ও বসুমতি পরিবহনের মালিকানায়ও তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এনায়েত উল্যাহর সম্পদ: স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ মোট ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর ১৩ কোটি ৭৬ লাখ, অস্থাবর ১৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর মিরপুরে ৮.২৫ বিঘা জমিতে ছয়তলা বাড়ি; দাম এক কোটি ১৩ লাখ টাকা।
মিরপুরের মনিপুরপাড়ায় ৮ শতাংশ জমিতে ছয়তলা আরেকটি বাড়ি; দাম ৫২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। রাজধানীর ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে ৬২ নম্বর বাড়ির ৪/এ নম্বর ৩ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দর বলা হয়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ১৫১ বর্গফুটের একটি দোকান; দাম ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। রাজধানীর দক্ষিণখানে ৭৮ শতাংশ জমির দাম ২৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, দক্ষিণখানের আরও ১০ শতাংশ জমির দাম এক কোটি টাকা। রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমির দাম ৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, রূপগঞ্জে ১০ কাঠা জমির দাম তিন লাখ টাকা। গাজীপুরের দনুয়া মৌজায় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা দামের জমি আছে। ফেনীতে তার নামে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে; যার দাম ৪০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেডের নামে রয়েছে ৮০টি বাস। ওই ৮০টি বাসের দাম দেখানো হয়েছে ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এনা পরিবহনের লাক্সারি বাসগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করছে। ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায় চলাচল করা তানজিল পরিবহনে এক লাখ টাকার শেয়ার ও বসুমতি পরিবহনে পাঁচ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। সোলার এন্টারপ্রাইজে আড়াই লাখ, এনা শিপিংয়ে ২০ লাখ ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে আট লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকার এফডিআর। ব্যাংকে নগদ জমা আছে তিন লাখ ৯৭ হাজার টাকা। বিয়ের সময় দান হিসেবে পেয়েছেন ২৫ ভরি স্বর্ণ।
স্ত্রী নার্গিস সামসাদের সম্পদ: নার্গিস সামসাদের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদ ১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ সাত কোটি ৩৭ লাখ, অস্থাবর ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার। এর মধ্যে রয়েছে, ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে ৫০ শতাংশ শেয়ার, মিরপুরের মনিপুরপাড়ার বাড়িতে ৫০ শতাংশ শেয়ার, রাজধানীর উত্তরায় তিন কাঠার প্লটের দাম ১৫ লাখ টাকা, ধানমন্ডিতে অন্য একটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা, সোলার এন্টারপ্রাইজে দেড় লাখ টাকার শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও এনাফুড অ্যান্ড বেভারেজে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা ও এনা ট্রান্সপোর্টে ৬০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে নগদ জমা এক কোটি ১৭ লাখ টাকা ও এক কোটি ১৬ লাখ টাকার এফডিআর (মেয়াদি আমানত) রয়েছে।
ছেলে রিদওয়ানুল আশিকের সম্পদ: রিদওয়ানুল আশিকের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদ রয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ আট কোটি ২৪ লাখ, অস্থাবর ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার। তার নামে এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার, রাজধানীর গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে পাঁচ কোটি টাকার ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৪/এ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থানে ১০৯ শতাংশ জমির দাম প্রায় তিন কোটি টাকা, উত্তরায় পাঁচ কাঠার প্লটের দাম চার লাখ টাকা। তার নামে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার এফডিআর ও ব্যাংকে নগদ ৯ লাখ টাকা রয়েছে।
মেয়ে চাশমে জাহানের সম্পদ: চাশমে জাহানের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদ রয়েছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ পাঁচ কোটি ১৮ লাখ টাকার, অস্থাবর সম্পদ ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাটটির দাম পাঁচ কোটি টাকা, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ায় পাঁচ কাঠা ভিটি জমির দাম তিন লাখ টাকা, রয়েছে এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার। এ ছাড়া তার নামে ৪২ লাখ টাকা মূল্যের (ঢাকা মেট্রো গ-১৫-২৫২৪) নম্বরের একটি গাড়ি রয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে খন্দকার এনায়েত উল্যার ব্যক্তিগত মোবাইলে বেশ কয়েক দিন ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গতকাল বিকেলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, তারা যেসব সম্পদের হিসাব দিয়েছেন সেগুলো অর্জনের উৎস সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে। সম্পদের বৈধ উৎসের প্রমাণ দিতে হবে। সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে কিনা- সেটাও অনুসন্ধান করা হবে।