সৈয়দপুরে ৭১এর বধ্যভূমির উপর নির্মিত নাটকে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী নইম গুন্ডার নাম আড়াল করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।
মোতালেব হোসেন : মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৈয়দপুরের ইতিহাস একেবারেই ভিন্ন। অবাঙ্গালী অধ্যুষিত সৈয়দপুর অবাঙ্গালীরা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করে যুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তান বাহিনীর সহায়তায় তারা অমানবিক পৈশাচিক গণহত্যা পরিচালিত করে। পাকিস্তানী সেনাদের যৌথ অত্যাচারে হত্যার হোলি খেলায় ইতিহাস তরুন প্রজন্ম প্রায় অজানাই থেকে যাচ্ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গণহত্যার উপর নির্মিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে একটি মঞ্চ নাটক সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট বধ্যভূমিতে গত ১৯ শে ডিসেম্বর রাত আটটায় অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সৈয়দপুরের ইতিহাসে ২৩শে মার্চ প্রথম শহীদ মাহতাব বেগ, অবাঙ্গালীরা তার মস্তক ছিন্ন করে শহরে উল্লাষ করে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী আর্মি ডাঃ জিকরুল হক সহ অনেককে ধরে নিয়ে যায়। ১২ই এপ্রিল তাদের রংপুর সেনানিবাসের অদুরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রেল কারখানার ভিতর শত শত দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীকে জলন্ত বয়লারে নিক্ষেপ করা হয়। সৈয়দপুর জুট প্রেসে জীবন্ত মানুষকে চাপ দিয়ে মেরে ফেলা হয়। শহরের প্রতিটি ইঞ্চিতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে তাদের দোসর অবাঙ্গালীরা। এবং সর্বশেষ ১৩ই জুন শহরে মাইকিং করে হিন্দু মাড়োয়ারীদের ভারতে পাঠানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ট্রেন থামিয়ে গোলাহাট নামক স্থানে ৪৪৮ জন নিরস্ত্র হিন্দু মাড়োয়ারীদের পরিবারের সকলকে ছুরি চাকু বল্লম দিয়ে হত্যা করে মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে অবাঙ্গালী ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। যা ইতিহাসে ট্রেন ট্রাজেডি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে ১৮ই এপ্রিল সৈয়দপুর শহরে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পীস কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে অন্যতম কাইউম ( কাইউম পেট্রোল পাম্প), নইম খান ওরফে নইম গুন্ডা, রুস্তম আলী গুন্ডা, শের আলী গুন্ডা, আজাদ খান, জমির খান, আজিমউদ্দিন গোয়ালা, মোল্লা তেল মিল, হানিফ চাল ব্যবসায়ী, তৌকির আহমেদ কেনেডি, ইজাহার আহমেদ, ইবরার আহমেদ, গোলজার আহমেদ, শামসুল হক, ময়েজ ঠিকাদার, তৌহিদ জর্দা, সালাউদ্দিন (সালারু), মো আমিন আমিন স মিল, মো আবদুল্লাহ (আবদুল্লাহ ফাউন্ড্রি), সামসুদ্দিন ওরফে ডিমলা হাজী, মতিন হাশমি, সেলিম খান, ইউসুফ বাট সহ অনেকে।
উক্ত নাটকের মহড়া চলাকালিন সময়ে নইম খান ওরফে নইম গুন্ডার অপরাধের চিত্র নাটকে অভিনয় হলেও চুড়ান্ত প্রদর্শনির দিনে কালো হাতের ইশারায় নাটক নির্দেশনা কমিটি দেবাশিষ ঘোষ নইম গুন্ডার নামের অংশটুকু নাটক থেকে কেটে বাদ দেন। নাটক চলাকালে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায়। এবং এব্যাপারে প্রথম আলোর সাংবাদিক ও শহীদ পরিবারের সন্তান এমআর আলম ঝন্টুকে টেলিফোনে প্রশ্ন করলে তিনি ঘটনার সর্ততা স্বীকার করেন এবং বলেন পরবর্তী নাটকে নইম গুন্ডার নাম অবশ্যই থাকবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন জানান নইম গুন্ডার পুত্র দিল নেওয়াজ খান বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এমপি খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর ক্যাডার তাই তারা সুকৌশলে প্রভাব বিস্তার করে নইম গুন্ডার অংশটি নাটক থেকে কেটে বাদ দিয়েছেন। তিনি আরো জানান এই ঘটনার উপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে। এবং এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতা ও সূধী সমাজ ব্যপক সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। সমাজে কি তাহলে দূর্নীতিবাজদের আশ্রয়ে রাজাকার যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানেরা বারবার নানান কৌশলে নিজেদের আড়াল করতে সক্ষম হবে?