আত্রাইয়ের পতিসরে স্মৃতিবিজড়িত কবিগুরু রবী ঠাকুরের কাছারি বাড়ি
রুহুল আমিন,আত্রাই থেকে : বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণের কবি এবং প্রতিটি বাঙালির কাছে একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে কবিগুরুর স্মৃতি। বাঙ্গালীর সংস্কৃতিজুড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের পায়ের চিহ্ন। তার লেখা বহু রচনাবলি ও বহু নিদর্শন আজও মানুষের মাঝে রয়ে গেছে এবং সেইগুলো আজীবন অমর হয়ে থাকবে। তিনি একাধারে বাংলাদেশ ও ভারতের সাহিত্য,সংগীত ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। সেই ধরনের এক নিদর্শন হচ্ছে পতিসরের রবী ঠাকুরের কাছারি বাড়ি যা বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসর নামক গ্রামের নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরাকীর্তি ও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। আহসানগঞ্জ রেল স্টেশন হতে সড়ক পথে ১৮ কিলোমিটার দূরে কাছারি বাড়িটি অবস্থিত। রেললাইন পার হয়ে সরু পিচঢালা রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে পতিসর পর্যন্ত। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরও দুটি কুঠি বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে পতিসরেরটি বেশ গোছানো । জানা যায়, ১৮৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ এ জমিদারি ক্রয় করেন। ১৮৯০ সালে তিনি জমিদারি দেখভাল করার জন্য এ অঞ্চলে আসেন। এখানে এসে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যংক, কালীগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট। তিনি এখানকার কৃষি কাজেও বেশ মনোনিবেশ করেছিলেন। কৃষি ও কৃষকের সনাতনী চিন্তায় তা প্রচন্ড আঘাত হেনেছিল। সেই জন্য এলাকার কৃষকরা তাকে বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখত। প্রায় এক একর জমির উপর স্থাপিত এই কাছারি বাড়িতে রয়েছে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমন: আরাম কেদারা,বোটে ব্যবহৃত গ্লোব,কবির স্বহস্তে লেখা বিভিন্ন চিঠিপত্রের অনুলিপি, দেয়াল আয়না, কাঠের আলমিরা,কৃষি ব্যাংকে ব্যবহৃত সিন্দুক, কলের লাঙ্গলের ফলা,পদ্মা বোটের নোঙর ইত্যাদি। প্রতিটি বস্তু সামগ্রীই পরম যতেœর সাথে সংরক্ষণ করা আছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে এসে বেশ কিছু রচণাবলি লিখেছেন, তার খ্যাতনামা কবিতা ‘‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে,” “তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে” ইত্যাদি। তবে পতিসর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে এর সিংহ দরজা। বিশাল আকৃতির দরজার উপরে রয়েছে একজোড়া সিংহের মূর্তি। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই নজর কাড়ে মাঝের ফাঁকা জায়গায় রবীন্দ্রনাথের দন্ডায়মান কংক্রিটের ভাস্কর্য। দৃষ্টিনন্দন এই কাছারি বাড়িকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু ভবন,যেগুলো আজও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। উত্তর দিকে রয়েছে বিরাট দীঘি। প্রতি বছরই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎসবমুখর পরিবেশে ও আড়ম্বরতার সাথে ২৫ শে বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষে দেশ বিদেশের কবি ভক্তরা এখানে সমবেত হয় এবং এই দিনে সেখানে একটি মেলারও আয়োজন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও দেবেন্দ্র মঞ্চে স্থানীয় এবং বিভিন্ন এলাকার শিল্পীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশি বিদেশি পর্যটকদের নিরাপদে অবস্থান ও বিশ্রামের জন্য রয়েছে শীততাপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক ডাকবাংলো। এই কাছারি বাড়িটি শুধু এলাকার মানুষের নয় বরং দেশের ও বিদেশের বহু পর্যটককে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে এবং এই কাছারি বাড়িটির জন্য এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত।