শিথিল হয়ে আসছে কঠোর লকডাউন, সারা দেশেই বেড়েছে মানুষ ও যান চলাচল, স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে উদাসীনতা
বিশেষ প্রতিনিধি: কঠোর লকডাউনের দশম দিন গতকাল রাস্তায় আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশি ছিল জনসমাগম ও যান চলাচল। বেড়েছে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচল। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে মানুষ বের হয়েছেন রাস্তায়। পুলিশি তল্লাশি এবং র্যাব, সেনাবাহিনীর টহল ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন রাস্তায় বের হওয়া বেশির ভাগ মানুষ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে জারি করা ‘কঠোর’ লকডাউনের দশম দিনে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭৯১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি ২১২ জনকে করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এদিন ৩৬১টি গাড়িকে ৯ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকার পাশাপাশি বাইরে বিভিন্ন শহরেও ভিড় বেড়েছে আগের তুলনায়। গত ১০ জুলাই সকাল থেকে সিলেট নগরীর রাস্তায় শুরু করে রিকশা চলাচল। বেশির ভাগ চালক ও যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্ক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচল। এসব যানবাহনেও চালক ও যাত্রীদের বেশির ভাগে মুখে ছিল না মাস্ক। কেউ মাস্ক পরলেও তা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। নগরের পাড়া-মহল্লার ভিতরের দোকানপাট ছিল খোলা। নগরের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের শাটার অর্ধেক খুলে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। পুলিশের দাবি যারাই রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে জেলা প্রশাসন, র্যাব ও সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছে। সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। বরিশালের রাস্তাঘাটে আবারও বেড়েছে যানবাহন এবং মানুষ চলাচল। প্রথম দিকে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি থাকলেও এখন অনেকটা শিথিল। যদিও টহল অব্যাহত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এদিকে লকডাউন ও স্বাস্থ্য বিধি বাস্তবায়নে নগরীতে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। অপরদিকে টিসিবি পণ্য বিতরণে গ্রাহকদের সামাজিক দূরত্ব রক্ষার তাগিদ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে গতকাল সকাল থেকেই রাস্তাঘাটে অনেক মানুষ এবং যানবাহন দেখা গেছে। রিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, মোটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচল করছে কোনো যাচাই ছাড়াই। সকালের দিকে নগরীর বাজারঘাটগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। বাগেরহাটে লকডাউনের দশম দিনেও সড়কে যন্ত্রচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক চলাচল বেড়েছে। বাগেরহাট জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলাজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত করোনা স্বাস্থ্য বিধি না মানায় ৭৩ জনকে ৫৪ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করেছে।
ময়মনসিংহে ঢিলেঢালাভাবে লকডাউনের দশম দিন চলছে। নগরীতে রিকশা, অটোরিকশার চলাচল বেড়ে গেছে। সকাল থেকেই নগরীর মোড়ে মোড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানবাহন এবং মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করছেন। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল বা হেঁটে অযথা কেউ রাস্তায় বের হলে জবাবদিহিসহ জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহে তিন হাজার মামলায় ২১ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চট্টগ্রামে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই শিফটে ভাগ হয়ে ১০ থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নগরের ৪১টি ওয়ার্ডেই অভিযান পরিচালনা করছেন। তবুও চলছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার হিড়িক। থেমে নেই মানুষের ঘোরাঘুরি, চলাফেরা, যাতায়াত ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল। অথচ প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গত নয় দিনে ৫১১টি মামলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেন।
ঝালকাঠিতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যে শনিবার রাস্তায় মানুষের ভিড় রয়েছে। শহরের মধ্যেই চুপিসারে দোকানপাট খুলে বেচাকেনা করছে। বাজারেও জটলা বেঁধে কেনাকাটা করছে জনসাধারণ। গ্রামে প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় দোকান পাট খোলা রয়েছে প্রায় আগেরমতোই। শহরে অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলেও গ্রামের মানুষের মাঝে এতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিকে বন্ধ থাকলেও রাস্তায় এখন যানবাহন চলাচলও বেড়েছে। মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা ও ভ্যানে একাধিক লোক চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে তৎপরতা বাড়িয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনছার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। লকডাউন অমান্য করায় শনিবার ৪৩ জনকে ২০ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।