মেয়র রাব্বানীর দুর্নীতির সাতকাহন
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: যদি ছোটখাটো চুরি হয় তাহলে সেটা সিঁধেল চুরি, তার থেকে বড় হলে পুকুর চুরি, তার বড় হলে সাগর চুরি, কিন্ত্ত যে চুরির নাই কোনো মাফজোক, নাই,কোনো সিমা পরিসিমা তাকে কি বলা হবে, ঠিক এমনই চুরির ঘটনা ঘটছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভায়। উপজেলার বহুল আলোচিত কথিত প্রায় শতবছরের রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান, তিনপ্রজন্মের জনপ্রতিনিধি, সৎ, দানবীর ইত্যাদি রকমারী উপাধীর সেই নেতা মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীরি চিত্র তুলে ধরে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্ত্ত দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক এসব অভিযোগের কোনো তদন্ত করা হয়নি, এতে জনমনে প্রশ্ন তবে কি তারা তদন্ত করতে পারছেন না ? নাকি নেপথ্য অন্যকিছু রয়েছে।এদিকে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির রেশ না কাটতে এবার মেয়রের বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ৬মে বুধবার ও ৭মে বৃহস্প্রতিবার প্যানেল মেয়রসহ ৭ জন কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।এদিকে পৌসভার জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরগণ এসব অভিযোগ করেছেন। কাউন্সিলরদের করা অভিযোগে হাটে হাড়ি ভেঙ্গেছে এতে তার সবকিছু ম্লান হয়ে গেছে, জনমনে ব্যাপক নেতিবাচক মনোভাব সৃস্টি হয়েছে, তাকে কর্মী-জনবান্ধব নয় এখন জনবিরোধী, উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা ও পৌরবাসীর গলার কাঁটা বলে তারা মনে করছে।এদিকে তার বিরুদ্ধে দুদুকে অভিযোগ করায় প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনপ্রজন্মের জনপ্রতিনিধি, সৎ, দানবীর ও জননন্দিত ইত্যাদি রকমারী উপাধী ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে এতোদিন রাজনীতি করেছেন বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। তিনি সরকারদলীয় মেয়র হিসেবে প্রায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন, এই সময়ের পৌরসভার উন্নয়নে প্রায় শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তবে পৌরসভায় দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। অন্যদিকে মেয়রের বিরুদ্ধে দুদুকে অভিযোগ ও ত্রাণ আত্নসাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড় দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া ও বইছে মূখরুচোক নানা গুঞ্জন।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট মঙ্গলবার মুন্ডুমালা পৌরবাসির পক্ষে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ কবির ও ৭ নম্বর কাউন্সিলর নাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে ৪টি প্রকল্পে দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের সুনিদ্রিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করে এসব দূর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও অবগতির জন্য অভিযোগের অনুলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সাংসদ, সচিব স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর প্রেরণ করেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান করলেই এসব অনিয়ম-দূর্নীতির সত্যতা পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন পৌর কাউন্সিলরগণ। কাউন্সিলরগণের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়াল সিন্ডিকেট করে নামে-বেনামে ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে।এছাড়াও মেয়র প্রায় ১৮ মাস পৌরসভায় কোনো সভা আহবান করেননি। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, মেয়র গোলাম রাব্বানী সচিব ও হিসাব রক্ষকের যোগসাজশে এডিবি তহবিলের টাকা রাজস্বখাতে স্থানান্তর করে ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট করেছে। আবার পৌরসভার অর্জিত রাজস্ব খাতের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে আতœসাৎ করেছে। এছাড়াও মুন্ডুমালা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড টেটনাপাড়া মহল্লায় দীঘিপুকুরে একই প্রটেকশান ওয়াল দুই বার দরপত্র দেখিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা আতœসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু প্রকল্পের কিছু কাজ নিম্নমাণের এবং কিছু কাজ না করেই ভূয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসৎ করা হয়েছে। এসব ছাড়াও গোপণে আরো অনেক দূর্নীতি করেছেন তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করতে তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। এব্যাপারে সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়াল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পৌরসভার সকল ক্ষমতা মেয়র স্যারের কাজেই তাদের দূর্নীতি করার কোনো সুযোগ নাই। তারা বলেন, একটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে কাউন্সিলরগণ তাদের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।