ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি করলে ‘কোনও ক্ষমা নেই’: হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত, গরিব-দুস্থ মানুষদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেউ যদি এমন করেন সবাই ধরা পড়বেন। তাতের কিন্তু কোনও ক্ষমা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে কয়েকটা এ ধরনের খবর বেরিয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে দেয়ার জন্য যে খাদ্যশস্য দেয়া হয়েছে, যে চাল দেয়া হয়েছে সেখান থেকে যারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেছেন এবং কিছু ধরা পড়েছেন তাদের ক্ষমা নেই। যদি প্রয়োজন হয় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। বিচার পরে দেখা যাবে।’করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রত্যেকেই যার যার এলাকা সুরক্ষিত করেন। হঠাৎ করে বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেবেন না। বাইরের কেউ যেন ঢুকতে না পারে।’সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষাটা নিজেকেই উদ্যোগ নিয়ে করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রবিবার (১২ এপ্রিল) দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সংযুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম), মাস্ক পরিষ্কার রাখুন। সবাইকে অনুরোধ করবো, মাস্কটা ব্যবহার করবেন। কারণ, এ ভাইরাসটা হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায়। অযথাই নাকে-চোখে-মুখে হাত দিবেন না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নিতে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।’তিনি বলেন, ‘অকারণে কেউ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটাছুটি করবেন না। কেউ শ্বশুর বাড়ি পরে গেলেও পারেন। কেউ আত্মীয়দের বাড়িতে পরে গেলেও পারেন। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কে কখন কার দ্বারা সংক্রমতি হবে সেটা কিন্তু বলা যাচ্ছে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে না।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির মতো এই করোনা ভাইরাস এসে হানা দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশ এটা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। যারা মারা গেছে আমি তাদের জন্য শোক-সমবেদনা জানাচ্ছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশও এ ভাইরাসে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে ৩০ জন মারা গেছে। সবার প্রতি শোক-সমবেদনা জানাচ্ছি।’তিনি বলেন, ‘এটা অবাক কাণ্ড, আজ একটা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব স্থগিত। সারা বিশ্ব ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাবন স্থবির হয়ে পড়েছে।’দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে আপনারা ঘরে থাকেন। আমি জানি, এই ঘরে থাকতে গিয়ে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আপনারা ঘরে থাকুন। আমি আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছি- সবাই প্রচুর গরম পানি পানের পরামর্শ দিয়েছে। আপনারা সেই পরামর্শ অনুসরণ করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। সংবাদমাধ্যম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছে। সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এসময় দেশের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এবার কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে বোর ধান উঠছে। ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। এবার কৃষক যেন ধানের ন্যায্য দাম পায় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো। ২ লক্ষ মেট্রিক টন বেশি চাল ক্রয় করবে সরকার।’তিনি বলেন, ‘কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করছি। এছাড়া আমরা কৃষকদের সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা এবং বীজ ও চারার জন্য ১৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে।’‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে অনেক কাজ বন্ধ। অনেকেই ধান কাটতে বিভিন্ন স্থানে যেতে পারে। আমরা তাদেরকে সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর। কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য আমরা সকল ব্যবস্থা করে দেবো।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। নিজেরা নিজেদের পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। সেটাই আমরা চাই। নববর্ষে কোনওভাবে লোকসমাগম করবেন না। কারণ লোকসমাগমেই এটা সংক্রমিত হয়।’তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ যত কমানো যায় ততই ভালো। সংস্পর্শ কমিয়ে আপনি উপার্জনের পথ করে নিতে পারেন। বড় মাঠ কিংবা খোলা জায়গায় সপ্তাহে অন্তত একদিন হাট বসালে ভালো হয়। সবাই দূরত্ব বজায় রেখে হাটে বসবেন। যারা হাট করতে আসবেন তারাও দূরত্ব বজায় রাখবেন।’
‘কে কেমন আছেন সেটা জানার জন্যই এ ভিডিও কনফারেন্স করছি। সবকিছু বন্ধ, আবার কারও কাছে রিলিফও চাইতে পারছেন না- এ ধরনের পরিবারের জন্যও আমরা খাবার পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। খাদ্যের আমাদের কোনও অভাব নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বাড়ির পাশে শাক-সবজি উৎপাদন করুন। বাসার ছাদে টবে যেটুকুই হোক উৎপাদন করুন। না হয় ছোট একটা মরিচের গাছই লাগান। সেটাও আপনার ভালো লাগবে। নিজেদের চাহিদাও পূরণ হবে। এতটুকু জমি যেন অনাবাদি না থাকে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তারপরও মানুষের জীবন বাঁচানোই এখন বড় কাজ।’তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট হচ্ছে জানি। আমি বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি। কোনও মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। আমি শুধু এটুকু বলবো- দুর্যোগ আসে, সেটা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়।’একইসঙ্গে রেডিও-টেলিভিশনে সরকারি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *