প্রাথমিকের ৩৮ জেলার শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করেছে মন্ত্রণালয়
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: হাইকোর্টের স্থাগিতাদেশের কারণে ৩৮ জেলার শিক্ষকদের যোগদান, ওরিয়েস্টেশন ও পদায়ন কার্যক্রম স্থগিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রলালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খান মো. নুুরুল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ এর নিয়োগ কার্যক্রম শিরোনামে প্রকাশিক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভূক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর ফলাফলে ৬০% মহিলা কোটা সংরক্ষিত হয়নি মর্মে মহামান্য হাইকোর্টে নিম্ন বর্ণিত জেলার পার্শ্বে উল্লেখিত রিট পিটিশন মামলা চলমান রয়েছে। উক্ত রিট পিটিশনের আদেশে মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছেন মর্মে জানা যায়।
ফলে নিম্ন বর্ণিত জেলাসমূহে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে যোগদানের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন বর্ণিত জেলাসমূহের অধিদফতরের ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের ৩৮.০১.০০০০.১৪৩.১১.০১১.১৮-১২/১৪০ নং স্মারকে জারিকৃত ১(ঘ-চ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত নবনিয়োগকৃত, শিক্ষকদের যোগদান, ওরিয়েস্টেশন ও পদায়ন কার্যক্রম অনিবার্য কারণবশতঃ স্থগিত করা হলো। নবনিয়োগকৃত শিক্ষকদের যোগদান, ওরিয়েস্টেশন ও পদায়নের তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।’যোগদান স্থগিতকৃত জেলাসমূহ হলো: ১. বগুড়া ২. নাটোর ৩.সিরাজগঞ্জ ৪. পাবনা ৫. মেহেরপুর ৬. চুয়াডাঙ্গা ৭. যশোর ৮. নড়াইল ৯. খুলনা ১০. কুষ্টিয়া ১১. বাগেরহাট ১১. বাগেরহাট ১২. ময়মনসিংহ ১৩. নেত্রকোণা ১৪. টাঙ্গাইল ১৫. গাজীপুর ১৬. ঢাকা ১৭. রাজবাড়ী ১৮. ফরিদপুর ১৯. মাদারীপুর ২০. কিশোরগঞ্জ ২১. শরীয়তপুর ২২. গোপালগঞ্জ ২৩. নরসিংদী ২৪. কুমিল্লা ২৫. চাঁদপুর ২৬. কক্সবাজার ২৭. বরিশাল ২৮. পিরোজপুর ২৯. বরগুনা ৩০. পটুয়াখালী ৩১. ভোলা ৩২. ঝালকাঠি ৩৩. সুনামগঞ্জ ৩৪. পঞ্চগড় ৩৫. দিনাজপুর ৩৬. নীলফামারী ৩৭. কুড়িগ্রাম এবং ৩৮. গাইবান্ধা।’
উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত জেলাসমূহ ব্যতিত অন্যান্য জেলাসমূহকে ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের ৩৮.০১.০০০০.১৪৩.১১.০১১.১৮-১২/১৪০ নং স্মারকে জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী প্রযোজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েকশ প্রার্থী হাইকোর্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৯ সালের নিয়োগ স্থগিত চেয়ে অর্ধশতাধিক রিট দায়ের করেন। বেশিরভাগ রিটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৩ এর ৭ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৩’ এর ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই বিধিমালার অধীন সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলোর ৬০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী, ২০ শতাংশ পৌষ্য এবং বাকি ২০ শতাংশ পুরুষ প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করতে হবে।’
তবে হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চ রিট শুনানি নিয়ে দেশের অধিকাংশ জেলার নিয়োগ ও যোগদানের কার্যক্রম স্থগিত করেন। তবে নওগাঁ জেলার নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত করলেও চেম্বার আদালতে তা স্থগিত হয়ে যায়।
তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নওগাঁ জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ বাতিল করেন। ফলে ওই জেলায় নিয়োগে আর কোনো বাধাই থাকছে না। দেশের যেসব জেলায় স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করতে আমাদের আইনজীবীকে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগবিধি অনুসরণ করে এবং কোটার শর্ত পূরণ করেই সব সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগবিধির কোনো ধরনের লঙ্ঘন হয়নি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কাছে সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আমি আশা করি নওগাঁ জেলার বিষয়ে আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য সব জেলায় নিয়োগে স্থগিতাদেশও আপিল বিভাগে বাতিল হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে ওই বছরের ১-৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ২৪ লাখ পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন। প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাস করেন। গত ৬ অক্টোবর থেকে নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাসব্যাপী দেশের প্রায় সব জেলায় মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। এ পরীক্ষায় ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।