থামছে না সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ড
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: বারবার আশ্বাসের পরও থামছে না সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ড। বেড়েই চলেছে এই একপেশী হত্যা। প্রতিবেশি এই দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর চলতি বছরের শুরুতেই এই হত্যাযজ্ঞ আশঙ্কা হারে বেড়েছে। শুধু চলতি বছরের ২৩ দিনেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ বাংলাদেশি। ২০১৮ সালে ১৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৩ বাংলাদেশি নিহত হলেও ২০২০ এর প্রথম মাসেই আশঙ্কাজনক সংখ্যক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তবে আশ্চর্যের বিষয়, ৩৩ লাখ কি.মি. এই দেশটির সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ৬টি দেশের। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ চলে শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই। এমনকি বাংলাদেশের এই বন্ধুরাষ্ট্রটির চিরশত্রু পাকিস্তানের সীমান্তেও এমন হত্যাযজ্ঞ হয় না। এছাড়া চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার সীমান্তেও এমন হত্যার ঘটনা প্রায় শূন্য। ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ভারত-নেপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী এসএসবির গুলিতে গোবিন্দ গৌতম নামে (৩২) এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে নেপালিয়ানরা। নেপালের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়া ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তখন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্ডর কাছে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। পরে গোবিন্দ গৌতমকে রাস্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, প্রতিটি ঘটনাতেই নিরস্ত্র বাংলাদেশিরা নিহত হয়েছেন। বিএসএফের গুলিতে যখনই কোনো বাংলাদেশি নিহত হয় তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাকে গরু চোরাচালানকারী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা দেখা যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক মানুষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তাদের অভিযোগ- গরু চোরাচালানের সাথে ভারতীয়রা জড়িত থাকলেও গুলিতে কেবল বাংলাদেশিরাই নিহত হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ-র দিক থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় সেটি যৌক্তিক নয়। সীমান্তে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিএসএফ সেটিকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বাসযোগ্য অজুহাত ছাড়া তারা প্রায়ই বলে ‘আত্মরক্ষার্থে’ তাদের গুলি করতে হয়। বেসামরিক মানুষকে মোকাবেলার জন্য যদি গুলি করতেও হয় তাহলে এমন জায়গায় সেটি করতে হবে যাতে প্রাণহানি না হয় বলেও মন্তব্য তাদের। বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম ফজলে আকবর (অব.) বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান ও গরু আনা নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি বিএসএফকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইন অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে এ ধরনের হত্যাকান্ড কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। দুই দেশের সীমান্তে অনেক অভিন্ন পাড়া রয়েছে। যেখানকার মানুষেরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও জীবিকার সন্ধানেও অনেকে সীমান্ত পারাপার হয়। কিন্তু সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সীমান্ত পার করছেন এমন কাউকে দেখলেই গুলি করছে। এই প্রবণতা বদলাতে হবে- এমনটা মন্তব্য আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা’র। ভারত যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে, তা বন্ধ না করলে আন্তর্জাতিক মহলের দ্বারস্থ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন’র দাবি, ‘ভারতের সাথে ৬টি দেশের সীমান্ত থাকলেও বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদেশের সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নেই বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বেপরোয়াভাবে মানুষ খুন করে গুলি ও নির্যাতনের মাধ্যমে। এর মূল কারণ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় আমরা দিতে পারছি না।’
আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর হতে পারছে না, এ জন্য আমাদের জাতিসংঘে গিয়ে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে মামলা করার বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।