জীবননগরে ইট ভাটার মাটি-বালু ট্রাক-লরি বেপরোয়া হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য প্রশাসনে নিরবতা
মো শান্ত আহাম্মেদ ,জীবননগর(চুয়াডাঙ্গা): চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় সরকারী ও ব্যাক্তি মালিকানায় থাকা নদী-নালা ও খাল-বিলে এবং ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির উৎসব চলছে। ট্রাক-লরি আর পাওয়ার টিলার যোগে বিভিন্ন ইট ভাটায় এসব মাটি চলে যাচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই সরকারী দলের লোকজন হওয়ায় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইট ভাটার মাটি টানা গাড়ীগুলো দাঁপিয়ে বেড়ানোর কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। মাটি টানা গাড়ীর কারণে ধুলা-বালি উড়ে গ্রামীণ পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। এ কারণে জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখে তেমনি গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের বছরখানেকের মাথায় তা ব্যাপক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জীবননগর উপজেলার একটি পৌরসভা এবং আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ২৪ টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব বৈধ-অবৈধ ইট ভাটার মালিকেরা মাটি ব্যবসায়ী চক্রের সাথে বিশেষ চুক্তিতে মাটি ক্রয় করে থাকেন। প্রান্তিক কৃষকদের নগদ টাকা কিংবা ইটের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কৃষি জমির ওপর অংশের উর্বর মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক স্থানে সরকারী খাস জমি কিংবা নদীর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। ড্রেজার কিংবা ভ্যেকু মেশিন ভিড়িয়ে মাটির স্তুপ গড়ে তোলার পর তা পর্যায়ক্রমে ট্রাক,লরি ও পাওয়ার টিলার যোগে নির্দিষ্ট ইট ভাটায় পৌছে যাচ্ছে।
মাটি টানা ট্রাক,লরি ও পাওয়ার টিলার চালকেরা ভোর রাত থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত টানতে থাকে মাটি। তাদের বেপরোয়া গাড়ী চালানোর ফলে রাস্তায় মাটি পড়ে ধুলা-বালির সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি টানা এসব ট্রাক-লরির ভয়ে এলাকাবাসী তাদের স্কুলগামী শিশু সন্তানদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটান। সম্প্রতি উপজেলার পশ্চিম বাড়ান্দী গ্রামে মাটি ট্রাক্টরের চাপায় পিষ্ট হয়ে পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে রাস্তার পার্শ্বের বাড়ী-ঘর ও দোকানপাটে ধুলা-বালিতে ভরে যায়। ফলে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
উপজেলার বালিহুদা গ্রামের শুকুর আলী বলেন,মাটি টানা গাড়ীগুলোর দাপট তো বহু দিন ধরেই দেখে আসছি। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। সাধারণ মানুষ এসব মাটি টানা গাড়ীর ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ মুখর হলে উল্টা ওই ব্যাক্তিকেই এক হাত দেখিয়ে দেয়া হয়। ইট ভাটার মাটি টানা গাড়ীতে তো প্রায়ই ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটছে,কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আর যদি কিছু না হয় তাহলে তা বন্ধ হবে কি ভাবে?
বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার খায়রুল ইসলাম বলেন,এলাকার ইট ভাটার মাটি টানা গাড়ীগুলোর দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ। মাটি টানা গাড়ীর কারণে এলাকার জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকি মুখে তেমনি কেবল মাত্র উন্নয়ন হওয়া রাস্তাগুলোও অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অহরহ ঘটলেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। মাটি টানা গাড়ীর চালকদের কাছে এলাকাবাসী রীতিমত জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক সামসুল আলম বলেন,ইট ভাটার মালিক এবং মাটি ব্যবসায়ী অধিকাংশই সরকারী দলের লোক। যারা অবৈধ ভাবে মাটি কাটছেন এবং যারা কিনছেন তারা সবাই প্রশাসনকে কোন না কোন ভাবে ম্যানেজ করে ফেলছেন। মাঝে মধ্যে দু’একটা জায়গায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেখলেও তা স্থায়ী নয়। বর্তমান সময়ে মাটি বিক্রেতা চক্রটি বেপরোয়া ভাবে মাটি বিক্রি করে চলেছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন,কৃষি জমির ওপরের মাটি উর্বর। জমির উর্বর অংশই যদি কেটে নিয়ে যায়,তাহলে ফসল ফলবে কি ভাবে? কৃষি জমির ওপর থেকে মাটি কেটে নেয়ার ফলে জমির যেমন উর্বরা শক্তি কমবে তেমনি ফসল উৎপাদনও হ্রাস পাবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন,ট্রাক,লরি ও পাওযার টিলার দিয়ে মাটি টানার ফলে উপজেলার গ্রামীণ সড়কের পাশাপাশি মহাসড়কের ক্ষতি হচ্ছে। তবে শিগগিরই এসব মাটি টানা গাড়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষি জমি ও নদীর মাটি কেটে বিক্রির ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।