তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভা আকুন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা পৌর ভবন আকুন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে অনিয়ম-দূর্নীতির আখড়া বা প্রাসাদে পরিণত হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় নাগরিকগণের অভিমত। চলতি বছরের ২০ আগস্ট মঙ্গলবার পৌরসভার কাউন্সিলরগণ পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে ৪টি প্রকল্পে দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের সুনিদ্রিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করে এসব দূর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। এছাড়াও সদয় অবগতির জন্য অভিযোগের অনুলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সাংসদ, সচিব স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর প্রেরণ করেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান করলেই এসব অনিয়ম-দূর্নীতির সত্যতা পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন পৌর নাগরিকগণ।
পৌরবাসির অভিযোগ, মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়াল সিন্ডিকেট করে নামে-বেনামে ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে। তারা জানান, সচিব আবুল হোসেন কুষ্টিয়া শহরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলেছে, আর আব্দুল আওয়াল পৌরসভার সামনে কোটি টাকা মূল্যর সম্পত্তি ক্রয় করেছে। তাদের অভিমত, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের আয়-ব্যয় ও সম্পদের অনুসন্ধান করলেই অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। বিগত আট বছরে মুন্ডুমালা পৌরসভায় কতটি প্রকল্পের বিপরীতে কতটাকা বরাদ্দ হয়েছে, এসব প্রকল্প কারা বাস্তবায়ন করেছে, প্রকল্পের নাম, বরাদ্দের পরিমাণ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম, বাস্তবায়িত প্রকল্পের কি অবস্থা, কতটি প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হয়েছে ইত্যদি বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সুনিদ্রিষ্ট তথ্য চানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। আবার প্রায় ৮ মাস ধরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বেতন-ভাতা না পেলেও সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের বিলাসী জীবন-যাপন দেখে এরা অশ্র“নজল চোখে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যপন করছে। পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, সচিব আবুল হোসেন জুয়ার বোর্ডে একাধিক ধরা পড়েছে এছাড়াও এক নারী স্টাফকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অপরাধে তাকে ফিরোজ সরকার প্রকাশ্যে উত্তম-মধ্যম দিয়েছে আবার তার পুত্রের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির কথা এলাকায় প্রচার আছে। এদিকে সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের অনিয়ম-দূর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নাগরিকগণ দীর্ঘদিন থরে তাদের অপসারণ (বদলী) দাবি করে আসছে এমনকি এসব দাবিতে ইতিপূর্বে মানববন্ধন করা হয়েছে বলেও এলাকায় গুঞ্চন রয়েছে। তাদের বেপরোয়া অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে পৌরসভার প্রায় ৩১০ জন তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মধ্যে এখন মাত্র ২০ জন ফিকাদার রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতার নেপথ্যে সহযোগীতা ও পৌরসভার কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে পৌর ভবন ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। এখানে কোন কাজ করতে গেলেই কাজ শুরুর আগে এই সিন্ডিকেটকে টেন পার্সেন্ট টাকা দিতে হচ্ছে, আর কোন কারণে এ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ঠিকাদারগণ কোন কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ নেতার নেপথ্যে সহযোগীতায় গঠিত ‘টেন পার্সেন্ট’ নামে পরিচিত সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো পৌর ভবন। স্থানীয় ঠিকাদার সুত্রগুলো বলছে, মুন্ডুমালা পৌর ভবনে এখন স্বাভাবিক নিয়মে কোন কাজ হয় না। কাজে ক্রটি থাক বা নাই থাক কতিপয় অসাধু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে চাহিদামত আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। আর তাঁর চাহিদামত আর্থিক সুবিধা দেয়া না হলে কথিত অভিযোগে ঠিকাদারদের বিল আটকে দেয়াসহ নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আবার ‘টেন পার্সেন্ট’ সিন্ডিকেট চক্রের ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ, কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল উত্তোলন, ঘুষ, অর্থ ছাড়ে কমিশন আদায় সব মিলিয়ে পৌর ভবনে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। পৌর নাগরিক এবং সাধারণ ঠিকাদারগণ সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালকে বদলীর মাধ্যমে এসব অনিয়ম দূর্নীতি দুর করে পৌর ভবনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এব্যাপারে সচিব আবুল হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার কনে বলেন, একটি মহল তার বাছে অবৈধ সুবিধা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে