বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ১৫ বছর ধরে একই কর্মকর্তার হাতে জিম্মি
কক্সবাজার প্রতিনিধি: দেশে সর্বপ্রথম সাফারী পার্ক কক্সবাজার জেলায় চকরিয়া উপজেলাধীন ডুলাহাজারাতে ৯০০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে দেশ-বিদেশে পার্কটির সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময়ের অনিয়ম দুর্নীতিতে অস্তিত্ব এখন বিলিন হওয়ার পথে। হুমকির মূখে পড়ছে জীব বৈচিত্রসহ বনজ সম্পদ। সাফারী পার্ক এলাকার ভিতরের ছড়া খাল থেকে বালু উত্তোলন, নির্বিচারে বনজ বৃক্ষ নিধন, উন্নয়নকাজে কোটি টাকার দুর্নীতি, বন্যপ্রাণী চুরি করে বিক্রি, পার্কে দর্শনার্থীদের ছিনতাই এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হরিণ চোরদের সাথে গোপনে হাত মিলিয়ে ধ্বংস হচ্ছে পার্কের প্রাণী বৈচিত্র। গত ৩০মার্চ ২০১৪ সালে হরিণের মাংস ও বন্দুক উদ্ধার করলেও সংগোপনে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল চোরকে। পরিবেশ পার্কের এ বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী টানা ১৫ বছর ধরে সাফারী পার্কে কর্মরত অনিয়ম দূর্নীতির হুতা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম। উল্লেখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এলাকার বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী বাবুল দাশ গতবছর ২৭ ডিসেম্বর দূদক চেয়ারম্যান, প্রধান বনসংরক্ষক সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তার অভিযোগে জানাযায় কুমিল্লার বাসিন্দা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম ফরেষ্ট একাডেমিতে পড়া লেখা করা কালিন সময়ে ছাত্র দলের ক্যাডার ছিলেন। বিএনপি সরকারের আমলেই এই সাফারি পার্কে নিয়োগ পায় এই ছাত্রদলের ক্যাডার। দীর্ঘ ১৫ বছর একটানা এপার্কে কর্মরত থেকে অনিয়ম, দূর্ণীতি ও সরকারী সম্পদ লুট করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। পার্কের একাধিক উন্নয়ন কাজে তিনি অঘোষিত ভাবে ঠিকাদারী কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বে পাগলির বিল মৌজার ১০ হেক্টর মূল্যবান বনজ বাগান কাঠচোরদের সাথে আতাত করে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাছাড়া জীববৈচিত্রের ভারসম্য রক্ষার্থে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সৃজিত ১৫ হেক্টর বাগান ও বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি কাঠচোরদের হাতে। যা সরজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তিনি সাফারী পার্কের হরিণ, মরা বাঘের মাংস, চামড়া ও মাথার খুলি বিক্রি করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন পাচারকারীদের কাছ থেকে। বিগত বছরে পার্কের সীমানা বাউন্ডারি ও ড্রেন নির্মাণ কালে মাজহারুল, ইন্জিনিয়ার ও ইজারদারের সাথে চুক্তি করে এক চতুর্থাংশ কাজও যথাযত হয়নি। নির্মাণাধীন ড্রেনের অনেকাংশ ভাঙ্গলে এখনো লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ও গাছ পাওয়া যাবে। উপরোক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অঞ্চলের অফিস আদেশ নং-৫৪, পিপি নং- ২২.০১.০০০০.১০১.০৫.২০১৪.৩১১২ মূলে বন্যপ্রাণী অঞ্চল ঢাকায় বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখনো পর্যন্ত সাফারী পার্কে বহালতরবিয়তে চাকুরি করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে বণ্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্রগ্রামের একাধিক ডিএফও বদলী হলেও তিনি তাদের বদৌলতে এখনো রয়ে গেছেনে। বর্তমান ডিএফও গোলাম মওলা ফরেস্টার মাজাহারুলের অনিয়ম, দূর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছেন। তার এলাকায় কুমিল্লায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে মাজাহারুল ইসলাম। নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসবে সত্যতা। বিশাল অঙ্কের টাকা লুটপাট করাতে সাফারি পার্ক নিয়ে বর্তমান সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ও মহতি উদ্যোগে ভেস্তে যেতে চলেছে। পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে গত বছরের ২০ অক্টোবর বন্যপ্রাণী অভয়রান্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলা পত্রিকায় কোন ধরণের দরপত্র আহবান না করে সম্পূর্ন গোপনীয়ভাবে সাড়ে তিন কোটি টাকার ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঠিকাদার নামদারী কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তড়িগড়ি করে সম্পূর্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। ওই কাজ গুলো টেন্ডার নাম্বার ৯-১৩ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী ২০১৬-১৭ অর্থ বছর (উন্নয়ন ও সম্প্রাসারণ শীর্ষক) প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় আরসিসি পরিক্ষা খনন ৫টি, (কোড নং ৭০৮) ও টেন্ডার ১৪ রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ (কোড নং ৪৯৪১)। নামে মাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হল, মাজেদুল ইসলাম উজ্জলের মাজেদ কন্ট্রাক্টশন, নাজমুল হক পিয়ারুর ব্রিজবি কন্ট্রাক্টশন, লিটনের তালহা এন্টারপ্রাইজ, শরাফত উল্লাহ বাবুল, রোমেন ও নুর হোসেন সহ ৫জনের একটি সিন্ডিকেট। এসময় ৫০ভাগ কাজ শেষ না করে প্রায় দেড়কোটি টাকা বিল উত্তোলন করে ফরেস্টার মাজাহারুল ইসলামসহ আত্মসাৎ করেছে। এতে করে পার্কের রক্ষনাবেক্ষন ভেঙ্গে পড়া নিয়ে ও বঙ্গবন্দুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে বণ্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলার সাথে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করে ও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে সাফারী পার্কের ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অভিযোগ গুলো সত্য নয়। আমি নিজ ইচ্ছায় বদলী হতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাকে ছাড়ছেনা।