সুজানগরে সফল মৎস্যচাষী পৌর কাউন্সিলর খোকন আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণে এখন কোটিপতি

IMG_1712
এম মনিরুজ্জামান: পাবনার সুজানগর পৌরসভার কাউন্সিলর আনিছুর রহমান খোকন ১৯৯৮ সালে মাত্র অর্ধ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করে ১০ বছরের ব্যবধানে আজ তিনি অর্ধশত বিঘায় মাছ চাষ করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাড়ির পাশের ৩০ বিঘা আয়তনের শত বছরের পরিত্যক্ত ভাগারে স্বচ্ছ জলধারা বইয়ে দিয়ে। সেখানে এখন বাহারি সব জাতের মাছ চাষ হচ্ছে। বছরে নিট মুনাফা হচ্ছে ত্রিশ লাখ টাকা। এ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মৎস্য চাষী সুজানগর পৌর সদরের আনিছুর রহমান খোকন এখন নিজ হ্যচারী পাড়ে দাঁড়িয়ে বলতেই পারেন- ‘মাছ চাষ হল সোনার ব্যবসা’ সম্প্রতি খোকন তার খামার ঘুরিয়ে দেখানোর সাথে সাথে জানাচ্ছিলেন আনসার ভিডিপির ছোট একটি প্রশিক্ষণ কিভাবে তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সালে আনসার ভিডিপির গ্রাম ভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ নেন। সে প্রশিক্ষণের পর তিনি মাছ চাষে উৎসাহিত হন। ১৯৯৮ সালে মাত্র আধা বিঘা জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ভাল মুনাফা পান, সে টাকায় ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠান। সংসারে স্বচ্ছলতা আসে। উৎসাহিত হন খোকন। তাকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সুজানগর শাখা। ২০০০ সালে তিনি ১০ বিঘা আয়তনের পুকুর লীজ নেন। তার চেষ্টা, শ্রম, আন্তরিকতা আর স্থানীয় মৎস্যবিভাগের পরামর্শে তিনি ভাল মুনাফা পান। তার হ্যচারীতে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটতে থাকে। ২০০৪ সালে আরও ১০ বিঘা আয়তনের পুকুর লীজ নেন। আশাতীত সাফল্য লাভের পর তিনি পৌর সদরের ৩০ বিঘা আয়তনের পরিত্যক্ত ক্যানেল লীজ নিয়ে সংস্কার করে সেটিকে মাছ চাষের উপযোগী করে সবাইকে অবাক করে দেন। এখন তিনি অর্ধ শতাধিক বিঘায় মাছ চাষ করছেন। কেমন মুনাফা হচ্ছে মাছ চাষে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান- মাছ চাষ তো সোনার ব্যবসা। বছরে ৪০-৪৫ লাখ টাকা নীট মুনাফা পান বলে তিনি তার হ্যচারীতে দাঁড়িয়ে এ কথা আজ বলতেই পারেন। তার হ্যচারীতে সার্বক্ষণিক ১০ জন লোক কাজ করে এছাড়া মৌসুমী শ্রমিক তো থাকেই। বড় জলায় রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, সিলভার কাপ, পুটিকাপ, বাটা মাছের পাশাপাশি ছোট ছোট কিছু পুকুরে তিনি ডিম ফোটান, ষ্টক পোনা রাখেন। গত দু’ বছর হ’ল তিনি পোনা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে তিনি একটি আধুনিক হ্যচারি করবেন বলে আমাদের জানালেন। ‘দেখাদেখি চাষ আর দেখাদেখি বাস’ প্রবাদের প্রমাণ দেখলাম খোকনের মহল্লায়। তার দেখাদেখি অনেক শিক্ষিত যুবক মাছ চাষে এগিয়ে এসেছেন। খোকন এ প্রসঙ্গে জানালেন, পরিকল্পিত উপায়ে দু’বিঘা জমিতে মাছ চাষ করলে তার আর চাকরি খোজার প্রয়োজন নেই। আনিছুর রহমান খোকন মাছ চাষে দৃষ্টন্ত স্থাপন করায় স্থানীয় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কৃত জাতীয় সমাবেশ পুরুস্কার সম্মাননা পত্র ঢাকার শফিপুর থেকে ২০০৯ সালে তাকে শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষীর পুরষ্কার প্রদান করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ২০০৮, ২০০৯, ২০১৭ সালে সুজানগর মৎস্য বিভাগ থেকে সনদপত্র পেয়েছেন। তিনি নানারকম ভাবে সমাজ সেবা করে চলেছেন। এলাকার জনগণও তাকে এখন একজন সফল ও কৃতি মানুষ হিসাবে জানেন। আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক আব্দুল খালেক খান বলছিলেন তিনি একজন সফল ভিডিপি সদস্য ও তাদের একজন মডেল মৎস্য চাষী। খোকনের মত মাছ চাষীকে উৎসাহিত করতে পারলে মৎস্য সেক্টরে আরও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। কাউন্সিলর আনিছুর রহমান খোকনের মৎস্য হ্যচারী পরিদর্শন করেন পাবনা জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনির জেলা কমান্ডেন্ট ড. লুৎফর রহমান, গণসংযোগ সহকারী ও চ্যানেল আই, দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক আব্দুল খালেক খান, সুজানগর উপজেলা কমান্ডেন্ট হামিদুর রহমান, মৎস্য অফিসার আতিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ মাস্টার, দৈনিক মানবকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম জুয়েল, দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি এম মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *