ঝিনাইদহে সেই মেধাবী স্কুল ছাত্র টুলু হত্যায় পিআইবির তদন্তে মুগ্ধ এলাকাবাসী:সুবিচারের আশায় টুলু পরিবার

Dead-Tulu-Picture1-JND
জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে মেধাবী স্কুল ছাত্র টুলু হত্যায় পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন) এর তদন্ত শুরু হওয়ায় সুবিচারের আশায় টুলু পরিবার সহ গ্রামবাসী খুশিতে বুক বেধে আছে। টুলু পরিবার সহ তালসার গ্রামবাসী বিশ্বাস করে টুলু হত্যার রহস্য এবার উম্মচিত হবেই হবে। তারা টুলু হত্যার ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে নতুন করে পোষ্টমার্টেমের দাবী তুলেছে। জানাগেছে, ঝিনাইদহ আদালত বাদী সাবদার মন্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান টুলু হত্যা মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহকে তদন্ত পুর্বক আগামী ৯ আগষ্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে ১৫ই জুলাই শনিবার সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান টুলুর মৃত্যু রহস্য নিয়ে পিআইবি প্রথম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিনের তদন্ত অভিযানে ঝিনাইদহ যোনের পিআইবির এডিশনাল এসপি এসএম ফজলুল হকের নির্দেশনায় তদন্ত অফিসার এসআই সোহেল হোসেন, এসআই খালেকুজ্জামান সহ অন্যান্য অফিসার ও কনেস্টবলের উপস্থিতিতে টুলু হত্যার তদন্ত অভিযান পরিচালনা করেন। এলাকাবাসী পিআইবির তদন্ত দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সারাদিনের তদন্তে এক গ্লাস পানিও স্পর্শ করেননি ব্যতিক্রমী এই পিআইবি টিমটি। এমনকি তের খরচা বাবদ ১টি টাকাও নেননি পিআইবি টিম। তালসার গ্রামের সাবেক, বর্তমান মেম্বর, সমাজসেবক, সরকারদলীয় নেতা, সহ এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত ও ব্যাবহার দেখে সত্যি আমরা খুশি। তাছাড়া খরচা বাবদ ১টি টাকাও নেননি, এমনকি এক গ্লাস পানিও স্পর্শ করেননি নতুন এই পিবিআই টিম। এতে করে আশাকরা যায় এবার অবশ্যই মেধাবী স্কুল ছাত্র টুলু হত্যার রহস্যর জট খুলবে বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ঘাগা তালসার গ্রামের মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান টুলুর মৃত্যু রহস্য আটকে গেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার কারণে ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ টুলুর পরিবার। তারা নিরুপায় দারাস্থ হয়েছেন আদালতের। হত্যা মামলা করেছেন ৮ জনের বিরুদ্ধে। মামলায় আসামী করা হয়েছে তালসার গ্রামের মুল্লুক চাঁদ মন্ডলের ছেলে জাকির মন্ডল, জমির উদ্দীন মন্ডল, আমিরুদ্দীন মন্ডল, নজরুলের ছেলে আশাদুল, ঘাগা গ্রামের চিটা কাজীর ছেলে নজরুল মন্ডল, ইসমাইল মন্ডলের ছেলে জাকির মন্ডল, জাকির মন্ডলের ছেলে আল আমিন ও জহির মন্ডলের ছেলে মিল্টন মন্ডল। এলাকাবাসি ও স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা টুলু হত্যার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার তারা তালসার বাজারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তারা টুলু হত্যার ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে নতুন করে পোষ্টমার্টেমের দাবী তুলেছে। এদিকে আদালত বাদী সাবদার মন্ডলের নালিশী অভিযোগটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন(পিবিআই) ঝিনাইদহকে তদন্ত পুর্বক আগামী ৯ আগষ্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বেগম ফাহমিদা জাহাঙ্গীর গত ২ জুলাই এ আদেশ দেন। বাদী তার নালিশী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তার ছেলে হাবিবুর রহমান টুলু (১৪) দশম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র। সে কোটচাঁদপুরের তালসার কাজী লুৎফর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। একই স্কুলের ছাত্রী ও নজরুল মন্ডলের মেয়ে শাহানাজ ঘটনার তিন দিন আগে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে তারা স্কুল ছাত্র টুলুকে সন্দেহ করতে থাকে। গত ১০ জুন রাতে প্রধান আসামী জাকির মন্ডল ফোন করে টুলুকে তার সাথে দেখা করতে বলে। টুলু সরল মনে তার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দিন প্রতিবেশি আয়াত আলীর ছেলে সুমন, আজাদের ছেলে মহসিন, জমিরের ছেলে তুহিন ও জিয়াউর রহমানের ছেলে ইমরান তাল চুরি করে ঝোড়ের মধ্যে খাচ্ছিল। তারা দেখে ৪/৫ জন মানুষ একটি মৃতপ্রায় লোককে ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তারা ভয়ে আতংকিত হয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে আসে এবং টুলুর লাশ পাওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। এদিকে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আগেই আসামীরা বাড়ির মালামাল নিয়ে গাঢাকা দেয়। যা পরোক্ষ ভাবে প্রমান করে আসামীরাই টুলুর হত্যাকারী। বাদী টুলুর পিতা সাবদার মন্ডল জানান, টুলু বাইরে যাওয়ার সময় তার কাছে নিজের শিক্ষা বৃত্তির ১৩’শ ও জমি বিক্রির এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা ছিল। সে টাকাও খুনিরা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় হত্যাকারীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলে তারা অপমৃত্যু মামলা গ্রহন করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান আঃ হান্নান, জৈনিক শিক্ষক, সাবেক মেম্বর বাহাজ্জেল হোসেন ও বর্তমান মেম্বর বদিউজ্জামান জানান, হাবিবুর রহমান টুলু খুব ভাল ছাত্র ছিল সে ২০১২ ইং সালে তালসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সাধারন গ্রেডে বৃত্তি পায়। স্থানীয় জনগনের জোর মন্তব্য এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড। আগে থেকে তাকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে, পরে তার মৃত দেহটি গাছে ঝুলিয়ে রখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, আমরা টুলুর মৃত্যুর বিষয়ে কঠোর ভুমিকায় ছিলাম। আসামী গ্রেফতারে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা কথাটি আসায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি আসামীদের পালিয়ে থাকার বিষয়টি সত্য বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *