যশোরের মণিরামপুরে আলোচিত হত্যা মামলার আসামী সন্ত্রাসী আতাউরের গুলিবিদ্ধ লাশ

3
আনোয়ার হোসেন,মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের মণিরামপুরে আলোচিত মানোয়ার হত্যা মামলার আসামী র‌্যাব পুলিশের কথিত সোর্স সন্ত্রাসী আতাউরের (৩০) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত পহেলা মে সোমবার রাত ১২ টার দিকে পুলিশ উপজেলার কুলটিয়া সড়কের পাড়িয়ালি হরেন্দ্র নাথ বালার রাইচ মিলের পাশ থেকে আতাউরের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আতাউর স্থানীয় বাগডাঙ্গা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। এই ঘটনায় রাতেই পুলিশ শহিদুল ইসলাম (৩২) নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। শহিদুল ওই এলাকার রজব আলীর ছেলে। মণিরামপুর থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, সোমবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে শহিদুল থানায় খবর দিয়ে খুনের ঘটনা জানায়। খবর পেয়ে রাত ১২ টার দিকে পাড়িয়ালির পাকা রাস্তার পাশ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওসি বলেন,‘ঘটনা জানার পর সহকারী পুলিশ সুপার আবু নাসেরসহ তিনি ঘটনাস্থলে গেছেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে শহিদুল বেরিয়ে আসে। সে আমাদের জানিয়েছে, সন্ধ্যা রাতে শহিদুল ও আতাউর স্থানীয় কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়ের সাথে দেখা করতে আলীপুরে তার বাড়িতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি শুরু হলে তারা রাস্তার পাশে একটি দোকানে অবস্থান করে। বৃষ্টি থামার পর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মোটরসাইকেলে আতাউর ও শহিদুল বাড়ি ফিরছিল। ওই সময় শহিদুল বাইক চালাচ্ছিল আর আতাউর পেছনে বসা ছিল। তারা পাড়িয়ালি হরেন্দ্র নাথের রাইচ মিলের নিকটে আসলে দুটি মোটরসাইকেলে ৪ জন তাদের গতি রোধ করে শহিদুলের চোখে লাইট মেরে তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তারপর দুর্বৃত্তরা আতাউরের গলায় ও নাকে গুলি করে তাকে হত্যা করে।’ ওসি জানান,লাশের ডান পাশে চোয়ালের নিছে, বাম পাশের গালে,নাকে গুলির বা ক্ষতচিহ্ন এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওসি ধারণা করেন,স্থানীয় একটি হত্যা মামলার সূত্রধরে কোন্দলে আতাউর খুন হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে লাশ যশোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওসি মোকাররম। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা রাতে ঝড়বৃষ্টিরর পরে দুই-তিনটি শব্দ শুনেছেন। তবে সেটা গুলির কিনা তা তারা বুঝতে পারেনিন। আতাউরের স্ত্রী শাহানাজ পারভিন রুমি বলেন, ‘মানোয়ারের খুনের সাথে আমার স্বামী জড়িত ছিলেন না। তারপরেও স্থানীয়দের ভয়ে আমরা যশোরের রাজারহাটের বাড়িতে থাকতাম। গত দেড়মাস আসে সেই মামলার বাদি পক্ষের সাথে মিলমিশ হয়েছে। তারপর স্থানীয়দের অনুরোধে গত ৫ দিন আগে আমরা এখানে বাড়িতে ফিরি।’ রুমি জানান, সোমবার দুপুরে তার স্বামীকে চেয়ারম্যান ফোন করে দেখা করতে বলে। সন্ধ্যার আগে শহিদুলকে সাথে নিয়ে সে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে যায়। পরে তার স্বামীর লাশ উদ্ধার হয়। রুমির দাবি,তার স্বামীকে কারা মারতে পারে তাদের নাম সোমবার দুপুরে আতাউর তাকে বলে গেছেন। সেই ঘটনা প্রকাশ করলে তাদের সবাইকে সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলবে। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলেন,‘আমি ফোন দিইনি। ওই দিন দুপুরে আতাউর আমাকে ফোন করে দেখা করতে চাইলে আমি তাকে সন্ধ্যায় আসতে বলি।’ কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন,‘গ্রামের গ-গোল মেটানোর কথা সে আমাকে বলেছে।’ আমি তাকে বলেছিলাম,সময় নিয়ে বসে সব ঠিক করে দেব। প্রসঙ্গগত, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ রাতে উপজেলার বাগডাঙ্গা এলাকার নির্মান শ্রমিক মানোয়ার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তখন মানোয়ারের ভাই আলতাফ বাদি হয়ে আতাউরকে এক নম্বর আসামী করে ৪ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি ও পিআইবি’র কয়েকদফা তদন্তে আতাউরের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সে জামিনে ছাড়া পায়। তখন থেকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে এলাকায় ঢুকতে পারেনি আতাউর। এঘটনার কয়েক মাস পরে রাজারহাটে বিয়ে করে সেখানকার নিজ বাড়িতে থাকত সে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *