যশোরের মণিরামপুরে ১২ ইউনিয়ন ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা

0021
আনোয়ার হোসেন,মণিরামপুর: খুলনা বিভাগ ভিক্ষুকমুক্ত করণের অংশ হিসাবে যশোরের মণিরামপুরে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কার্যক্রম চলছে। গত বছরের আগস্ট হতে শুরু করে বৃহস্পতিবার (২৭.৪.১৭ ইং) পর্যন্ত উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ভোজগাতী,ঢাকুরিয়া,হরিদাসকাঠি,মণিরামপুর সদর, খেদাপাড়া, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর, চালুয়াহাটি, খানপুর,কুলটিয়া,নেহালপুর ও মনোহরপুরকে ভিক্ষুকমুক্ত ইউনিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ৩৪ জন তালিকাভুক্ত ভিখারির মাঝে বিভিন্ন উপকরণ তুলে দিয়ে ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর। উপকরণ হিসাবে ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের মধ্যে ৫ জনকে পাকা দোকানঘর ও ২৯ জনকে ছাগল প্রদান করা হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল মন্ডল,সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিংকন বিশ্বাস,ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ ও ইউপি সদস্য বাবরআলী,সঞ্জয়রাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া খানপুরের ৩৪ জন ভিখারিকে ফেয়ার প্রাইজ ও ভিজিডি’র আওতায় আনা হয়েছে। এদিকে খানপুর ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও ইউনিয়নে এখনও অনেক ভিক্ষুক রয়েছেন যাদের নাম তালিকাভুক্তিকরণ বা পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ভিখারিদের ছাগল বিতরণ অনুষ্ঠানে ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাবর আলীসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করে তালিকায়স্থান পায়নি এমন ৬ জন ভিখারির নাম জানিয়েছেন। এরা হলেন, দক্ষিণ ভরতপুরের জবেদা (৭০),তার মেয়ে শরবানু (৪৫),আমিনুর রহমান (৩৪),খুরশিদা (৪৮),মকমতলার বিধবা রওশনারা (৪০) ও শেখপাড়া গ্রামের বিধবা ফুলজান (৭০)। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবন্ধী,বৃদ্ধা,বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলা রয়েছেন। তবে এদেরকে দ্রুত পুনর্বাসন করা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, প্রায় ১০ লাখ টাকার ফান্ড তৈরিসহ কয়েকধাপে সার্ভে করে মণিরামপুরে পৌরসভাসহ ১৭ টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত ৫৫৪ জন ভিখারিকে পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলছে। যার মধ্যে পৌরসভা, রোহিতা, কাশিমনগর, হরিহরনগর,শ্যামকুড় ও দূর্বাডাঙ্গা এই পাঁচটি ইউনিয়ন বাদে বাকি ১২ টি ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে এই পাঁচটি ইউনিয়নকে ভিখারিমুক্ত করা হবে। মণিরামপুর উপজেলাকে ভিখারিমুক্ত করতে চারটি পদ্ধতিতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে এগুচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে,ভিখারিদের খুদ্র ব্যবসার জন্য এককালীন অর্থ প্রদান, প্রত্যেক ভিখারিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তিকরণ,এনজিও কর্তৃক ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য এককালীন অর্থ বা গাভী,ছাগল,হাঁস-মুরগী পালনের জন্য অর্থ প্রদান,সর্বনিন্ম পুঁজি ১৮ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা প্রদান,বিভিন্ন হাটে একটি করে পাকা দোকান ও দোকান পরিচালনার জন্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা প্রদান,একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পভুক্ত করে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা ও কর্মক্ষম ভিখারিদের নানামুখি প্রশিক্ষণ প্রদান। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, আগামী ৩০ তারিখ মণিরামপুর উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে ১২ টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম শেষ হয়েছে। নানামুখী জটিলতার কারণে পৌরসভায় এখনও কোন কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
ভিখারিমুক্ত ইউনিয়নগুলোতে এখনও অনেক ভিখারি পুনর্বাসের আওতার বাহিরে রয়েছে তাহলে কিভাবে ইউনিয়নগুলো ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনা হলো এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘তালিকা প্রনয়ন পুর্ণাঙ্গ করার লক্ষে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি কোন ভিক্ষুক বাকি থাকে তাদের নাম পাওয়া মাত্রই পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *