বগুড়ায় ১৪ বছর শিশু মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় পিতাকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মী তুলে নিয়ে হত্যা

একান্ত প্রতিনিধি:
বগুড়ায় ১৪ বছরের শিশু মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তার পিতা শাকিল আহম্মেদ (৪০)কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় করতোয়া নদীর নয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, নিহত অটো রিকশা ভ্যান চালক শাকিল আহম্মেদ বগুড়া শহরের শিববাড়ি শাহী মসজিদ লেনে মৃত হানিফের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে রানা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকেন। একই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী জিতু তার (শাকিল) শিশু মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। শাকিল এতে রাজি না থাকায় তার সঙ্গে জিতুর বিরোধ সৃষ্টি হয়।

স্বজনদের দাবি, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই নেতাকর্মীরা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। তাদের অভ্যাস পরিবর্তনকি হবে না। স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মী জিতু ও তার লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জিতু ও তার সহযোগী মতিকে আটক করেছে। ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জোবায়ের এ তথ্য দিয়েছেন।
এর জের ধরে শনিবার দুপুরের আগে জিতুর সাথে শাকিলের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে শাকিল ছুরিকাঘাত করলে জিতুর হাত কেটে যায়। বেলা ৩টার দিকে শাকিল বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় জিতুর নেতৃত্বে তার সহযোগী মতি, মোমিদুল, বিপ্লব, সুমন প্রমুখ শালিকের ভাড়া বাড়িতে আসেন। তারা মারপিট না করার আশ্বাস দিয়ে শাকিলকে ধরে ফুলবাড়ি এলাকায় করতোয়া নদীর নয়াঘাট এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তারা শাকিলকে বেদম মারপিট করে ফেলে যান। স্থানীয়রা শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে বিকাল ৬টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজন ও স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জোবায়ের জানান, শাকিলের ১৪ বছর বয়সী মেয়ে আছে। একই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী জিতু ওই মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শাকিল তার শিশু মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না, কারণ মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়ায় ও জিতু একটি বাজে ছেলে। এ নিয়ে দু’জনের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে শাকিল প্রতিপক্ষ জিতুকে মারপিট করেন। এর প্রতিশোধ নিতে জিতু ও তার লোকজন শাকিলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেছেন।

সদর থানার ওসি হাসান বসির জানান, জিতুর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যায় জড়িত থাকায় জিতু ও তার সহযোগী মতিকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে তাদের অভিযান চলছে। নিহত জিতুর বোনরা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই নেতাকর্মীরা বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন। জিতু বাড়ি থেকে তাদের ভাইকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের কাছে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

অন্যদিকে গত শুক্রবার বিকালে ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে শহরের কাটনারপাড়ার এলাকায় বিদ্যুৎ শেখ (৩৫) নামে এক অটো গ্যারেজের মালিককে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার নিহতের বাবা শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার দুলাল শেখ সদর থানায় প্রতিবেশি রনি, তার ছেলে রুকু ও সহযোগী শাওনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। শনিবার দুপুরে বিদ্যুৎ শেখের মরদেহ নিয়ে এলাকাবাসীরা শহরের শিববাটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *