খুলনার দাকোপে বিভিন্ন নদীতে ভাসছে বড় বড় কুমির, জনমনে আতঙ্ক
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
খুলনার দাকোপে বিভিন্ন নদীতে যত্রতত্র ভাসছে বড় বড় কুমির। এমনকি ভয়ে এলাকার লোকজন নদীতেও নামতে পারছেন না। এতে নদী সংলগ্ন বসবাসকারি জনসাধারণের মাঝে বিরাজ করছে কুমির আতঙ্ক। সম্প্রতি উপজেলার ঢাংমারী এলাকার সুচিত্রা সরদার নামে এক ব্যক্তি কুমিরের আক্রমনে গুরুতর হওয়ার পর থেকে এই আতঙ্ক ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিগত বছরেও এলাকার কয়কজনের গরু ও ছাগল খেয়ে ফেলেছে কুমিরে।
প্রথক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার পশুর, চুনকুড়ি, ভদ্রা, ঢাকী, শিবসা, সুতারখালীসহ বিভিন্ন নদীতে মাঝে মধ্যে কুমির ভাসছে। ভয়ে এলাকার লোকজন নদীতেও নামতে পারছেন না। বিশেষ করে নদীর উপর নির্ভরশীল জেলেরা। এতে নদী সংলগ্ন বসবাসকারি ও জেলেদের মাঝে কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রথক্ষদর্শী বানিশান্তা এলাকার আবেদ খান জানান, ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা উপকূলীয় এই উপজেলা গঠিত। ফলে এখানে নদীর সংখাই বেশি। বেশ কিছুদিন যাবৎ সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা পশুর, ঢাংমারী ও সুতারখালী নদীতে কুমির ভাসতে দেখা গেছে। সম্প্রতি কয়েক দিন আগে পূর্ব ঢাংমারী এলাকার মৃত প্রফুল্ল সরদারের স্ত্রী সুচিত্রা সরদার (৫৫) খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় কুমিরের আক্রমনে গুরুতর আহত হয়। সে এখনো মোংলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এঘটনার পর থেকে সকলের মাঝে চরম ভাবে কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ ভয়ে নদীতে নামতেও পারছেন না। গোসলও করতে পারছেন না। এমনকি হাঁসও ছাড়তে পারছেন না। এ ছাড়া গত বছর কালাবগীর বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ ফকিরকোনা এলাকার খায়রুল ইসলাম মোড়ল কুমিরের আক্রমনে নিহত হয়। তা ছাড়া কয়েকটি গরু ও ছাগল কুমিরে খেয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া গত বছর বাড়ির পাশ^বর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন ঢাংমারী নদীতে প্রতিদিনের ন্যায় দুপুরে গোসল করতে যেয়ে রাজু হাওলাদারও গুরুতর আহত হয়।
এবিষয়ে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, এক সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদী গুলোতেও কুমির দেখা যেতো। তখন মানুষ নদীতে সহজে নামতো না ভয় পেতো। কালক্রমে মানুষের ব্যবহারে গ্রামের নদী গুলোর কুমির বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু সুন্দরবনে কুমির আছে তার সংখ্যাও অনেকটা কমে গিয়েছিল। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ২০৯ টি কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। পূর্বের কুমির গুলো সাধারণত তার একটা রাজ্য ছিল কিন্তু কুমিরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় তাদের রাজ্য হারায় অথবা খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ সাধারণভাবে মনে করে নদীতে কোন কুমির নাই এবং সে অবাধে নদীতে নেমে মাছ ধরে বা বিচরণ করে। হঠাৎ যদি কুমির আসে আর যদি না জানতে পারে তাহলে অনেকে কুমির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সব সময় মনে রাখতে হবে যেহেতু সুন্দরবনে কুমির আছে সুতরাং যে কোনো সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে কুমির চলে আসতে পারে এবং দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন তিনি।