রাজনীতির নিষ্ঠুর নিয়তি : খুলনা-৫ আসনে কাকে জয়ী করবে জনগণ

সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
খুলনা ৫ আসনে একদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। অন্যদিকে বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিসিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আসগার আলী লবী। রাজনীতির নিয়তির শিকার হতে যাচ্ছেন খুলনার দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। জোট রাজনীতির সূত্রে তারা ছিলেন একে অপরের ঘনিষ্ঠ। রাজনীতির মাঠে সেটি এখন মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে এই দুই নেতা। যা ইতোমধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের জেল-জুলুম, মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে অধিকাংশ সময়ই কারাগারে দিন কাটিয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে কালে ভদ্রে জামিন মিললেও মুক্তির পর জেল গেটে থেকে একাধিকবার পুরানো ও গায়েবি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। বলতে গেলে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পুরো সময়টা কাটে তার কারাবন্দি জীবন। তবে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনি মুক্তি পান এবং দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে হাজির হন। তিনি মুক্ত হওয়ার পর থেকে গত ১০ মাস তার নির্বাচনী এলাকার সর্বত্রই উপস্থিতির জানান দেন। তার সঙ্গে রয়েছে দলীয় সুশৃঙ্খল নেতা-কর্মীর নিবেদিত শ্রম। অতীতে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে তিনি খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসন থেকে চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন এবং দলের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করেন।

ডুমুরিয়া-ফুলতলা বিএনপি’র একাধিক নেতা জানান, খুলনা-৫ আসনে বিএনপি’র ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও বিগত দিনে দলীয় প্রার্থী না থাকা এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা নিরূপন করা সম্ভব হয়নি। তবে বিগত সময় বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ ছিল। বিএনপি-জামায়াতের সম্মিলিত ভোটে তারা নির্বাচিত হন। যে কারণে বিএনপি-জামায়াতের কার কতো ভোট তা সঠিক নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। তখন মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল আ’লীগ। এবার মাঠে আ’লীগ থাকছে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। এবাইর বোঝা যাবে বিএনপি-জামায়াতের কার কেমন ভোট। যদি উভয়ের ভোট কাছাকাছি হয়, সেক্ষেত্রে সাধারণ আ’লীগের সমর্থক ও সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায়ের ভোট হবে জয়-পরাজয়ের নির্ণয়ক।

২০০১ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। গত ৫ আগস্টের পর বলতে গেলে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক চিটিয়া দখলে রেখেছেন রাজনীতির মাঠ। তাছাড়া সুসংগঠিত জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি খুবই চমকপ্রদ।
অপর খুলনা-৫ আসনে দীর্ঘদিন বিএনপি’র কোনো যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আপসোস ছিল। এবার আলী আসগার লবী প্রার্থী হওয়ায় ঐক্যবদ্ধ বিএনপি চেষ্টা বদলে দিতে পারে সকল হিসাব-নিকাষ। জমে উঠেছে খুলনা-৫ আসনে আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তবে সব কিছু ঠিক থাকলে খুলনা-৫ আসনে যিনি বিজয় হবেন, তিনি রেকর্ড সৃষ্টি করবেন। একই সঙ্গে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র ভোটের মাঠে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি। যার অপেক্ষা করতে হবে আগামী ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *