১ যুগেও শেষ হয়নি জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ

জামালপুর প্রতিনিধি:
২০১৪ সালে জামালপুরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অস্থায়ীভাবে শুরু হয় জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যাত্রা। পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। গত ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের (চিকিৎসা শিক্ষা-১) এর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ফিরে পায় পুরনো নাম। ইতোমধ্যে পার হয়েছে দীর্ঘ প্রায় ১২টি বছর।

জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাইপাস সড়কের মনিরামপুর এলাকায় ২০১৬ সালে ৩৫ একর ফসলি জমি অধিগ্রহণ শুরু হয় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ। পতিত সরকারের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের নামে দফায় দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তিন দফায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৫০ কোটি টাকা। এটি নির্মিত হলে জামালপুর ও আশপাশের চার জেলার ৫০ লক্ষাধিক মানুষ পাবেন উন্নত চিকিৎসাসেবা। ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৩০টি ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ নামে এ বৃহৎ প্রকল্পটি গ্রহণ করে ছিল পতিত সরকার। ২০১৬ সালে ৩৫ একর জমির ওপর শুরু হয় জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে কার্যাদেশ থাকলেও মূলত কাজের নামে পকেট ভারী করেন জামালপুরের আওয়ামী লীগের গডফাদার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও তার আস্থাভাজন পৌ/মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু। মেডিক্যাল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন, নার্সিং কলেজ, ছাত্রাবাস, অফিসার ও শিক্ষক ডরমেটরিসহ ২৬টি ভবনই নির্মিত হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। তবে এক যুগেও ৫০০ শয্যার মূল হাসপাতাল ভবনের কাজ শুরুই হয়নি।

সরেজমিন জানা যায়, হাসপাতালের ছোট-বড় ৩০টি ভবনের মধ্যে ২৬টি ভবনের কাজ শেষ হলেও হাসপাতালের জায়গাটি এখনো পড়ে আছে বিশাল জলাশয় আকারে। আর ওই জলাশয়ে মাছ চাষ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তৎকালীন মেয়র ছানু। ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনের সাইড ম্যানেজার হারুন রশিদের বলেন, তারা মেডিক্যাল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন, ডাক্তার কোয়ার্টার, দুইটি ছাত্রাবাস ও দুইটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করেছে। সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র ৪ বছর আগে অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হলেও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে ভবনগুলো। করা হচ্ছে অত্যাধুনিক কনফারেন্স হলের কাজও। লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোস্তাকিম বিল্লাহ জনি বলেন, হাসপাতালের কাজ কবে শুরু হবে কেউ বলতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানান, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে পকেট ভারী করেছে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীরা। মূল ভবন নির্মাণ না হওয়ায় অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ২৬টি ভবন । জামালপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ । আর জুন-২০১৯ সালের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২৩ সালে আবারো জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানায় জেলা গণপূর্ত বিভাগ । স্থানীয় রবিউল বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজটি চালু হলে রোগীদের আর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হতো না। অনেক রোগী সেখানে নেয়ার পথেই মারা যায়।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, মেডিক্যাল কলেজ চালু না হওয়ায় ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ওপর রোগীর প্রচণ্ড চাপ বেড়েছে ।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব জিওবি ফান্ডে পাঠানো হয়েছে। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল ভবন নির্মাণ না হওয়ায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *