বিস্ফোরক মন্তব্য “ড. ইউনূস ছাগল দিয়ে হালচাষ করছেন”—প্রবাসী সাংবাদিক কনক সরওয়ার

সেখ রাসলে, সহকারী দপ্তর সম্পাদক, অনলাইন ডেস্ক:
প্রবাসী সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. কনক সরওয়ার বলেছেন, গত ১০ মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে সরকার পরিচালনা করছেন, তা তার একেবারেই পছন্দ হয়নি। ৮ জুন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেন— ড. ইউনূস ছাগল দিয়ে হালচাষ করার চেষ্টা করছেন এবং তার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অন্তত ১৫ জনকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া উচিত।

তিনি জানান, যদি দেখা যায় ড. ইউনূস সেই পুরনো ঢিমেতালে চলছেন এবং যেসব উপদেষ্টারা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে তার অবস্থান বা দিক পরিবর্তন হবে। কারণ ব্যক্তি ড. ইউনূস ও উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কনক সরওয়ার বলেন, এবারের ঈদুল আজহার নামাজের পর ড. ইউনূসকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়া হয়েছিল, যা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি এজন্য এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

গতকাল (০৮ জুন) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কনক সরওয়ার বলেন, এই ধারা যদি আগামী কিছুদিনের মধ্যে না দেখি, যদি দেখি তিনি সেই ঢিমেতালেই চলছেন, এইসব উপদেষ্টাদের নিয়েই কাজ করছেন যারা উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে থেকে নানা রকমের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আপনারা দেখেছেন শান্ত সচিবালয়ে একটি অধ্যাদেশ দিয়ে অশান্ত করে দেওয়া হয়েছে যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন এগুলোর কোনোই দরকার ছিল না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ধরার বিষয়ে একটি দাবি ছিল সেটি একটু অগ্রসর হয়ে আবার ধামাচাপা পড়ে গেছে। অর্থাৎ একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিছু মানুষ। ড. ইউনূস যদি তাদের লালন-পোষণ করেন, তাদের নিয়েই কাজ করতে চান তবে আমার ডাইরেকশনে পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি ড. ইউনূস আর উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রধান উপদেষ্টা পদে বসে তিনি যদি ঠিকভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে না পারেন, তিনি যদি আবেগের বশবর্তী হন, তিনি যদি উপদেষ্টাদের প্রতি কঠোর হতে না পারেন, তিনি যদি কোনো পরিবর্তন না আনেন তবে বাংলাদেশের যে আশা নিয়ে আমরা বসে আছি সেটা পূরণ হবে না। আগামী কিছুদিনের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, কেন আমরা এভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি ড. ইউনূস এর গুরুত্ব বুঝতে পারছেন কিনা। এই উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে তিনি আদৌ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা।

বাংলাদেশে আমরা আসলে সরকার পরিবর্তন চাই না, আমরা চাই সিস্টেমের পরিবর্তন। যেই সিস্টেমের পরিবর্তনের জন্য গত জুলাইতে আমাদের ছাত্র জনতা অকাতরে জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এখনো আহত ছাত্র-জনতা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তাদের আহাজারি এখনো থামেনি, রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। কিন্তু এখনই বাংলাদেশের যে পুরাতন রাজনীতি সেই রাজনীতির অনেক খেলা আমাদের সামনে আসছে। তিনি আরো বলেন, একজন সাধারণ মানুষ ড. ইউনূসকে বলছিলেন— দালালদের কথা শুনবেন না স্যার, পাঁচ বছর আপনাকে চাই। তো পাঁচ বছর চাওয়া বা না চাওয়ার বিষয় আমার কাছে নেই। আমি কোনোভাবেই অনির্বাচিত সরকারকে পাঁচ বছর চাই না। আমি চাই একটু গুণগত পরিবর্তনের পরেই নির্বাচন হোক। ইতিমধ্যে ড. ইউনূস দুইদিন আগে জাতীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছেন। সেটি নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিএনপি ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। জামায়াত-এনসিপি স্বাগত জানিয়েছে। একটি জটিল পরিস্থিতির দিকে আমার বাংলাদেশ যাচ্ছে।

কনক সরওয়ার বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, জুন থেকে নির্বাচন এসেছে এপ্রিলে। সেটি মানছে না প্রধান দল বিএনপি। অনেক রকমের বক্তব্য আসছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নাকি তার ভব্যতার সীমা অতিক্রম করে গেছেন। আমি অবশ্য বুঝতে পারছি না ভব্যতার সীমা কোনটা, কোন সীমার কথা বলছেন। তো সেই পুরাতন রাজনীতির মারপ্যাঁচ আবার শুরু হয়েছে। জানিনা সামনে কী হবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে আমরা যা দেখছি সেটি শেষ দেখা নয়। পর্দার অন্তরালে এখনো অনেক কিছুই বাকি আছে। সে বিষয়টি যদি রাজনৈতিক দলগুলো বোঝে তবে তাতে দেশেরই কল্যাণ হবে। আর যদি না বোঝে তবে কারোরই কিছু করার থাকবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কারণ সুযোগ সন্ধানের অপেক্ষায় আছে পলাতক আওয়ামী লীগ। পলাতক হাসিনার নির্দেশনায় এবং তাদের যে পরিমাণ অবৈধ অর্থ তারা পাচার করে বিভিন্ন যায়গায় সঞ্চয় করে রেখেছে, সেই টাকা তারা অকাতরে সঞ্চয় করে রেখেছে।

তিনি বলেন, গত ১০ মাসে ড. ইউনূস যেভাবে সরকার চালাচ্ছেন সেটি কোনোভাবেই আমার পছন্দ হয়নি, হচ্ছে না। সেটি আমি বিভিন্ন সময় বলেছি। আমি বলেছি, তার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে কমপক্ষে ১৫ জনকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে। এবং আমি বলেছি ড. ইউনূস ছাগল দিয়ে হালচাষ করার চেষ্টা করছেন। এই ধারা যদি আগামী কিছুদিনের মধ্যে না দেখি, যদি দেখি তিনি সেই ঢিমেতালেই চলছেন, এইসব উপদেষ্টাদের নিয়েই কাজ করছেন যারা উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে থেকে নানা রকমের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন; ড. ইউনূস যদি তাদের লালন-পোষণ করেন, তাদের নিয়েই কাজ করতে চান তবে আমার ডাইরেকশনে পরিবর্তন আসবে। কারণ ব্যক্তি ড. ইউনূস আর উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মধ্যে পার্থক্য আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *