খালিশপুরে তেল ব্যবসায়ী ফরহাদসহ ৩ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা

সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
খুলনা নগরীর কাশিপুরে তেল ব্যবসায়ী ফরহাদসহ ৩ জনকে প্রকাশ্যে ফিল্ম স্টাইলে গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে ৩ জুন দৌলতপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় শেখ পরিবারের ক্যাশিয়ার খ্যাত ও ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টু (৫০)সহ ১৬ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামীরা হলো, নগরীর খালিশপুর থানাধীন কাশিপুর মেঘনা রোডের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে রহিম বাবু (৪৭), দিঘলিয়া থানার সুগন্ধি গ্রামের বাসিন্দা তামজিদ আলমের ছেলে এস এম তাজবিদ আলম তমাল (৩৫), উত্তর কাশিপুর মেঘনা রোডের বাসিন্দা বিএনপি নেতা শেখ জাকির হোসেনের ছেলে জিসান (২৬), মফিজুল ইসলামের ছেলে রোহান আহম্মেদ ইমু (২৭), আজিজুলের ছেলে রক্সি (৩১), নুরনগরের বাসিন্দা শেখ আমির আলীর ছেলে পিন্টুর দেহরক্ষি আমানত আলী (৫০), উত্তর কাশিপুর মেঘনা রোডের বাসিন্দা শেখ জাকির হোসেনের ছেলে শেখ ফরহাদ হোসেন জেনিত (২৬)সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন।
এজহারে উল্লেখ করা হয়, “এজাহার নামীয় ১নং আসামী একজন সাবেক কাউন্সিলর এবং একাধিক হত্যা মামলাসহ বহু মামলার আসামী। সে সকল অপকর্মের হোতা এবং অর্থযোগানদাতা। আমার ভাইপো শেখ খালিদ আহম্মেদ বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১ নং আসামীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়। আমার ভাইপোর নির্বাচনে আমি সর্বাত্বকভাবে সহযোগীতা করার কারনে এবং ব্যবসায়িক বিরোধের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১নং আসামীসহ অন্যান্য আসামীরা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জানমালের ক্ষতিসহ জীবননাশের হুমকী উদ্দেশ্যে ওঁৎ পেতে থাকা আসামীরা আকস্মিকভাবে আমার গতিরোধ করে। কিন্তু আমার সাথে অনেক লোকজন থাকার কারণে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ঐ দিন ১, ২ ও ৩নং আসামীগন আমাকে হুমকী দিয়ে বলে, ‘আজ লোকজন থাকায় বেঁচে গেলি তবে আমরা যেখানেই থাকি না কেন তোকে আমাদের লোকজন ১ মাসের মধ্যে হত্যা করবে’। তাদের হুমকীর পর হতে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে থাকি। কিন্তু ১, ২ ও ৩নং আসামীদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র ও অর্থ যোগান দেওয়ায় মাধ্যমে ৪নং হতে ৮নং আসামীগন আমাকে হত্যা করার যাবতীয় পরিকল্পনাসহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মে বিকাল পৌনে ৪টায় ব্যবসায়িক কাজ শেষে আমি যমুনা ডিপো হতে বের হয়ে আমার ব্যবহৃত প্রাডো গাড়ীতে ড্রাইভারের পাশে বসে বাড়ী ফেরার পথে দৌলতপুর থানাধীন কাশিপুর মালা গ্যারেজ তিন রাস্তার মোড়স্থ পশ্চিম পার্শ্বে যমুনা রোড পাকা রাস্তার উপর পৌছানো মাত্র ৪নং হতে ৮ নং আসামীগনসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামী পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার গাড়ির সামনে একটি পিক আপ আড়াআড়ি দাড় করায় এবং ২টি মোটর সাইকেল যোগে ৬জন অস্ত্রধারী গাড়ীর সামনের দিক হতে আসে। উক্ত পিকআপ হতে ৭নং আসামী একটি শর্টগান নিয়ে নেমে আমাকে সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার গাড়ীর সামনে গ্লাসে বাম পাশে তাক করে একটি গুলী করে। উক্ত গুলী গ্লাসে ভেদ করে গুলির স্প্রিন্টার আমার মাথার বাম পাশে, চোয়ালে লাগে (৭টি স্প্রিন্টার)। তখন ৪নং আসামী তার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে একই জায়গায় আরো একটি গুলী করে। তখন আমি মাথা নিচু করলে গুলীর স্প্রিন্টার আমার বাম হাতের বাহুতে, আমার ড্রাইভার মোঃ মনিরুল ইসলামের বাম হাতের বাহুতে এবং গাড়ীতে থাকা আমার কর্মচারী সোহেলের পিঠের বাম পাশে লেগে মারাত্বক জখমপ্রাপ্ত হয়। তখন ৫নং আসামী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে উক্ত গুলি গাড়ীর গ্লাসের সামনের বাম পাশে লাগে। তখন আমার নির্দেশে ড্রাইভার গাড়ী পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য ব্যাক গিয়ারে দিলে ৬নং আসামী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে উক্ত গুলি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে গাড়ীর সামনের অংশে লাগে। এ সময় ৮নং আসামী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে উক্ত গুলী লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে গাড়ীর সামনের অংশে লাগে। এ সময় অজ্ঞাতনামা আসামীরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গাড়ীর চাকা অচল করার জন্য অনবরত গুলি করলে একাধিক গুলি গাড়ীর সামনে ও পেছনের বিভিন্ন জায়গায় লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য আমার ড্রাইভার কৌশলে গাড়ীটি ঘুরায়ে রাজধানীর মোড় অভিমুখে আসার সময় আসামীরা কিছুদূর আমাদের পিছনে ধাওয়া করে এবং আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। আমরা কোনমতে জীবনে বাঁচিয়ে পালায়ে যাই। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনার বিষয় অবগত হয়ে ঘটনাস্থলে এসে কিছু আলামত উদ্ধার পূর্বক জব্দ করেন। ঘটনার পরপরই সাক্ষীগন আহত অবস্থায় আমাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আমার ড্রাইভার মোঃ মনিরুল ইসলাম ও কর্মচারী সোহেল চিকিৎসা গ্রহণ করে এবং আমাকে ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। উক্ত হাসপাতালে আমার অপারেশন এবং ১ জুন পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে আমি কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে মামলা দায়ের করি।” দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলী জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখনও কোন আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি তবে আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *