রেললাইনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ কোরবানি পশুর হাট
আদমদীঘি প্রতিনিধি :
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর স্টেশনের রেললাইনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সরকারি ভাবে ইজারা নিয়ে প্রতি শুক্র ও সোমবার এই হাট বসানো হচ্ছে। ট্রেন আসলে পশু নিয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে হাটের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। যদিও এখানে হাট বসানোর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেই।
জানা যায়, উপজেলার নসরতপুর স্টেশনের প্ল্যাটফরম সংলগ্ন রেললাইনের ওপর কোরবানির পশুর হাট বসানো হচ্ছে। অথচ এই রেললাইন দিয়ে প্রতিদিন দোলনচাঁপা, করতোয়া, লালমনি, রংপুর ও বুড়িমারি এক্সপ্রেস সহ প্রায় ১৬টি আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। সপ্তাহের দুই দিন এখানে পশুর হাট বসানোর কারণে যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
কোরবানির গরু কিনতে আসা সান্তাহারের ক্রেতা মমতাজ মাষ্টার বলেন, রেল লাইনের পাশে গরু-ছাগল নিয়ে আসা ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু হাটটি ইজারা হচ্ছে এবং সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, সেহেতু হাটের স্থানটি নিরাপদ জায়গায় নির্ধারিত করা প্রয়োজন। এখানে পশুর হাট বসানোর মতো কোনো স্থান নেই। ফলে ইজারাদার কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছে মতো রেললাইন দখল করে পশুর হাট পরিচালনা করছেন।
আরেক ক্রেতা হোসেন আলী জানান, অবৈধ ভাবে রেললাইনে হাটটি বসানো হয়েছে। তার ওপর এই হাটে টাঙানো হয়নি পশুর মূল্য তালিকা। আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত খাজনা। আবার রশিদে লেখা হচ্ছে না পশুর মূল্য। এ সব দেখার যেন কেউ নেই।
গত শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নসরতপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরম সংলগ্ন সচল ও অচলসহ প্রায় সব রেললাইল দখল করে আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে কোরবানি পশুর হাট। প্রচুর গরু, ছাগল ও ভেড়া উঠেছে। লোকজনের ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকায় মুশকিল। এরপরও কেনা-বেচা চলছিল। এরই মধ্যে সান্তাহার থেকে বগুড়াগামী একটি ট্রেন আসার সিগন্যাল হয়। সেটি শুনতে পেয়ে হাট ইজারাদারের পক্ষ থেকে মাইকে ডেকে বলা হয় ট্রেন আসছে সাবধান! রেল লাইন থেকে গরু সরাও। শুধু তাই নয়, রেল লাইন থেকে লোকজন ও পশু সরিয়ে নিতে বেশ কয়েকজন গ্রাম পুলিশকে বাঁশি বাজিয়ে ডিউটি করতেও দেখা যায়। এমন পরিস্থিতির কারনে ট্রেনগুলোকে অনেক দূর থেকে হুইসেল বাজিয়ে গতি কমিয়ে ফেলতে হচ্ছে। ফলে ঈদ যাত্রার সিডিউল ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাটে আসা আমিনুল ইসলাম সোহাগ নামে একজন জানান, আইন অমান্য করে দীর্ঘ দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ নসরতপুর স্টেশনের সামনে রেল লইনের ওপরই গরুর হাট চলছে। যা মোটেও ঠিক নয়। কেন উপজেলা প্রশাসন কর্তৃকপক্ষ এখানেই হাট ইজারা দেয় তা আমার বোধগম্য নয়। হাট ইজারাদার লোকমান হোসেন বাবু জানান, রেল মন্ত্রনালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে চিঠি এসেছে। সেই চিঠিতে লেখা আছে এখানে হাট বসানো যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান বলেন, রেল লাইনে হাট বসানোর কোনো অনুমোদন নেই।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, স্থানীয় আবেদন জমা পড়লেও ডিসি স্যার এবং রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই হাটের কোন অনুমোদন এখনো আসেনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান, প্রভাবশালী ইজারাদার এই হাট অবৈধ ভাবে পরিচালনা করছে, আমরা হাটের উচ্ছেদ অভিযানে যাব, ইনশাআল্লাহ।