ভাই বোন দ্বারা গঠিত স্কুল-শিক্ষক সবই আছে নেই শিক্ষার্থী!

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি:
বিদ্যালয়ের কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে নেই। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শূন্য শিক্ষার্থী। তবুও ৬ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। আর স্কুল মাঠ যেন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের চরদাদনা পূর্বপাড়া মিয়া উল্লা দেওয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সরেজমিন সোমবার (২৬মে ) দুপুরে অনুসন্ধানে এমনই চিত্র উঠে আসে। ভাই বোন দ্বারা গঠিত
স্কুলের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় এমন চিত্র বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। এ সময় দেখা যায়, অফিস ও শ্রেণিকক্ষ অগোছালো ও অপরিষ্কার। প্রবেশ করেই দেখা গেল স্কুলে সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষার্থীদের কোনো কোলাহল। স্কুল সংলগ্ন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক ভাই বোনদের বাড়ী হওয়ায় তিনজন তিনদিক থেকে ছুটে আসেন। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল তৃতীয় ,চতুর্থ,পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসরুম শূন্য। তবে আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে স্কুলের শিক্ষকরা তাড়াহুড়া করে শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় উপস্থিতি লিখে দেন।
এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক ভাইবোন দের প্রকাশ্যে হাতাহাতি হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের মত বিনিমিয় ও কথা বার্তা হয়না। বিদ্যালয়ের প্রায় ২লাখ টাকা মূল্যেও গাছগুলো নস্ট হচ্ছে এর কোন প্রতিকার শিক্ষকদের নেই। শিক্ষক ভাই বোনের দ্বÐে প্রতিষ্ঠানটি মরুভ’মিতে পরিনত হচ্ছে। শিক্ষকদের এলাকার ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর আগ্রহ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে।
এছাড়াও প্রতি বছর ¯øীপের টাকা আত্বস্বাত ও দ্বায়িত্বে অবহেলাসহ প্রতিষ্ঠানের নাজুক অবস্থার জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ গফুর প্রধানের অবহেলাকেও দায়ী করেন এলাকাবাসী।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে এমপিও ভুক্তি হয়। প্রাক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত খাতা-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ জন ও শিক্ষক ৬ জন। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্রভিন্ন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রাক ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস এবং ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। স্কুল খাতা-কলমে উপস্থিতি শতভাগ থাকলেও উপস্থিতি শুন্য।
প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক তিন ভাই বোনদের দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয়ের পাশেই তাদের বসতবাড়ি হওয়ায় শ্ক্ষিার্থী নেই অজুহাতে প্রায় সময়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রধান শিক্ষক হারুনূর রশিদ বলেন,এককিলো মিটারের মধ্য তিনটি বিদ্যালয় ও কওমি মাদরাসা হওয়ায় ছাত্রছাত্রী কমে গেছে। এছাড়াও রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় অনেকেই সদরে কিন্ডারগার্টেন লেখাপড়া করার কারণে এ বছর সমস্যাটা বেশী হয়েছে। তবে তিনি ¯øীপের টাকার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
সহকারী উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা গফুর প্রধান বলেন, আমাদের অফিসে লোকবল কম। দাপ্তরিক কাজ সহ প্রায় ৯০ টা স্কুলে দেখভাল করতে হয়। এখনো ওই স্কুল পরিদর্শন করতে পারিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। সরেজমিনে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন-ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি জানলাম। ঘটনা সঠিক হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *