ইসলামপুরে যমুনা গিলে খাচ্ছে সাপধরী

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জামালপুরের ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নে বিস্তীর্ন এলাকা যমুনা নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই নদী ভাঙ্গনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষ। ফের যমুনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে সাপধরী জনপদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত যমুনার ছোট্ট একটি শাখা নদী। পানি বাড়ার সাথে সাথেই কাশারীডোবা পয়েন্টে গত কয়েক দিনের ভাঙনে দূর্গম যমুনা চরে ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে হতাশায় দিন কাটছে কৃষকদের।
জানা গেছে, উপজেলার বেলগাছা পয়েন্টে যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সাপধরীর এই শাখা নদীটি শীলদহ, সিন্দুরতলী, প্রজাপতি, নন্দনের পাড়া, চরশিশুয়া, শিশুয়া, কাশারীডোবা, ইন্দুল্লামারী, আকন্দপাড়া, মন্ডলপাড়া, চেঙ্গানিয়া, টগার চর ও দৈলকের চর হয়ে সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী এলাকায় গিয়ে আবারো যমুনার মূলস্রোতে মিলিত হয়েছে।
এই শাখা নদীটির দুই তীরের প্রজাপতি, কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া ও মন্ডলপাড়া এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে গত ৫ বছর ধরে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন চলছে। এবছরই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে কাশারীডোবা এলাকার পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুইটি বাজার, তিনটি স্কুল, পাঁচটি মসজিদ এবং কয়েকশ একর ফসলি জমি।
এলাকাবাসী জানান, সাপধরী ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ ২০টি গ্রামই আশির দশকে সড়ক পথে উপজেলা শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল। সে সময় চরের কৃষি নির্ভর মানুষগুলো খুবই সুখি ও সমৃদ্ধশালী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সাপধরী ইউনিয়নের মানুষগুলোর সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশির দশক থেকে অধ্যবদি পর্যন্ত সময়ে এলাকাটি কয়েক দফা যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সাপধরী ইউনিয়নের প্রজাপতি থেকে চরশিশুয়া হয়ে চেঙ্গানিয়া পর্যন্ত এলাকায় আশির দশকে বর্ষা মৌসুমে যমুনার বামতীরে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের অব্যাহত নদী ভাঙনে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই সময় থেকেই এলাকাটি উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় নদী ভাঙন কবলিত মানুষেরা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে আশ পাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবার কেউ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর বন্দরে চলে যান। অনেকেই যমুনার পেটে জেগে উঠা সাপধরী ইউনিয়নের অন্য ছোট ছোট চরে বসতি গড়ে কষ্টের জীবন ধারনে বাধ্য হন।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে সাপধরী ইউনিয়নের সিংহভাগ ভুমি যমুনার পেট থেকে জেগে বসতি স্থাপনসহ চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠে। আবারো শুরু হয় বসতি স্থাপনসহ কৃষি আবাদ। কিন্তু সুখের জীবন শুরু হলেও সুখটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সম্প্রতি আবারো শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
সাংবাদিক আজিজুর রহমান চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে যমুনার ভাঙ্গন রোধে কাশারী ডোবা পয়েন্টের উজানে প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁশের পাইলিং নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এতদসত্বেও কাশারীডোবা পয়েন্টে এক হাজার মিটার এলাকা জুড়ে যমুনার বাম তীরে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বিস্তীর্ণ জনপদ। এ সময় এলাকাবাসী নদী ভাঙ্গন রোধ জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান- যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধে কাশারী ডোবা পয়েন্টে বাঁশের পাইলিং নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও নদ নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়নের বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *