আবারও মে মাসেই ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা: উপকূলে সতর্কতা জারি, নাম হতে পারে ‘শক্তি’ বা ‘মন্থা’

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট :
এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্ব ঐতিহ্য সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে বছর ঘুরে মে মাস এলেই উপকূলজুড়ে বাড়তে থাকে আতঙ্ক। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে—গত পাঁচ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাতটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পাঁচটিই সৃষ্টি হয়েছে এই মে মাসেই। গত বছর ২৭ মে উপকূলজুড়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’। তার আগে ২০২০ সালের মে মাসেই আঘাত হেনেছিল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে আবারও বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য মতে, ১৬ থেকে ২২ মে-র মধ্যে আন্দামান সাগরে এই নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়ে ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে একটি পূর্ণমাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আঘাত হানতে পারে ২৭ থেকে ৩০ মে’র মধ্যে

আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৭ থেকে ৩০ মে-র মধ্যে উড়িষ্যা-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে পারে। একই সময়ে আরব সাগরেও আরেকটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) সম্ভাব্য দুটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে ‘শক্তি’ ও ‘মন্থা’। পলাশের মতে, যদি আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি আগে দুর্বল বা নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
সতর্কতা ও ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস

এদিকে দেশের ছয়টি জেলার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
২১ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য জারি করা এক সতর্ক বার্তায় জানানো হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলার উপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতও হতে পারে।
সতর্কতা জরুরি, প্রস্তুতি প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে—এই সময়ের ঝড়গুলো সাধারণত অধিক শক্তিশালী ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বহন করে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকেও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *