বিকাশ বাছাড়,মাগুরা প্রতিনিধি:

মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় প্রধান আসামি হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এছাড়া বাকি তিন আসামি হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং দুই ছেলে সজিব শেখ ও রাতুল শেখকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বিচার শুরুর (সাক্ষ্যগ্রহণ) ২১ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হলো। এর আগে ১৩ মে মঙ্গলবার মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ দিন নির্ধারণ করেন।
গত ১৩ মার্চ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া। এর আগে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ঘটনার পর প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং পরে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় নেওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার ৮ মার্চ শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, বোন জামাই সজিব শেখ এবং সজিবের বড় ভাই রাতুল শেখকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ৪ আসামিই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতেই চলে বিচারিক কার্যক্রম।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দিলে ২০ এপ্রিল মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে চার্জগঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেন। চার্জ গঠনের পর ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ; শেষ হলো ৭ মে বুধবার ঢাকা মেডিকেলের দুই ডাক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এদিকে মামলার বিচারকার্য চলাকালে অভিযুক্ত মূল আসামি হিটু শেখ আদালতে যাওয়া-আসার পথে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে প্রতিদিনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে শিশুটির বোন হামিদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের আহ্বান জানান। অথচ এ ঘটনায় একাই জড়িত বলে গত ১৫ মার্চ তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে ৬ মার্চ শিশুটির ধর্ষণের ঘটনার খবর প্রচার হলে মাগুরাসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সড়ক অবরোধ, থানা ও আদালত ঘেরাও করে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন সর্বস্তরের মানুষ। স্থানীয় আইনজীবীরাও এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবির পাশাপাশি আসামিপক্ষকে কোনো প্রকার আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।
সরকারের পক্ষ থেকেও মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত সরকার পক্ষের আইনজীবীকে সহায়তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিযুক্ত স্পেশাল প্রসিকিউটার অ্যাডভাইজার (এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা) অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আসামিপক্ষে সোহেল আহমেদ নামে একজন আইনজীবীকে নিয়োগ করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী রায়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন এ রায়ে
যেহেতু আসামি পক্ষের তিনজন বেকসুর খালাশ পেয়েছেন আমি রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামি পক্ষ যদি উচ্চ আদালতে আপিল করতে চায় আমি তাদের সহযোগীতা করবো।
এদিকে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত সরকার পক্ষের আইনজীবীকে সহায়তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিযুক্ত স্পেশাল প্রসিকিউটার অ্যাডভাইজার (এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা) অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা রায়ের কপি হাতে পেলে তা পর্যালোচনা করে দেখে ঐ তিনজনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা যায় কিনা দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *