স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী ভিন্ন কায়দায় চাঁদাবাজি
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির রাজাপুরে ‘চাঁদার’ টাকা না পেয়ে নার্গিস বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর গরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে গরুটি নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর নাম বেল্লাল খান (৫৮)। তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের আজিজ খানের ছেলে এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত বেল্লাল খানের ভাষ্য, চাঁদার টাকার জন্য নয়, নার্গিসের স্বামীর কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকার জন্য তিনি গরুটি নিয়ে গেছেন। টাকা দিয়ে দিলে তিনি গরুটি ফেরত দেবেন। ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী। আবু বক্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। গরুটি ফেরত পেতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে গরুর বাছুর নিয়ে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় হাজির হন তিনি।
সকালে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় অবস্থিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় তলায় একজন আইনজীবীর চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নার্গিস বেগম। এ সময় তাঁর সঙ্গে শিশুসন্তানসহ গরুর বাছুরটি ছিল। নার্গিসের শিশুসন্তানটিকে বাছুরটি ধরে কান্না করতে দেখা যায়। নার্গিস বেগমের অভিযোগ, স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বেল্লাল ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না পেয়ে গরুটি নিয়ে গেছে। গরুর বাছুরটি মাকে হারিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট আমার স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় বেল্লাল। সে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের অনুসারী হওয়ায় বিভিন্নভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।’
অভিযোগের বিষয়ে বেল্লাল খান বলেন, ‘আমি নার্গিস বেগমের স্বামী আবু বক্করের কাছে ২০ হাজার টাকা পাই। সেই টাকা না পাওয়ায় আমি গরু নিয়ে গেছি। টাকা পেলেই গরু ফেরত দিয়ে দেব। আমি কারও মোটরসাইকেল নিইনি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক বছর আগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাবির কাছ থেকে গরুটি কিনেছিলেন নার্গিস। বেল্লাল গরুটি নিয়ে যাওয়ার পর আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা চমন মিয়ার উপস্থিতিতে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় গতকাল বিকেলে সালিস হয়। চমন মিয়া এ ঘটনায় বেল্লাল খানের পক্ষ অবলম্বন করে নার্গিস বেগমকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি ছাড়িয়ে নিতে বলেন। কিন্তু নার্গিস টাকা না দিতে পারায় গরুটি ফেরত দেননি বেল্লাল।
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। বেল্লাল কিছু টাকা নার্গিস বেগমের স্বামীর কাছে পাবে। আমি বেল্লালকে বলে দেব যেন কিছু টাকা মাসিক কিস্তির বিনিময়ে নার্গিস বেগমের গরুটি ফেরত দিয়ে দেয়।’ জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) মো. শাহ আলম বলেন, এ ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি নিজে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।