দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা কাটছে না

সেখ রাসেল, সহকারী দপ্তর সম্পাদক, অনলাইন ডেস্ক:
শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার চেয়েও আন্দোলন ও রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে ধ্বংস করছে নিজেকে ও সমাজ তথা দেশকে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছেন কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী। পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে শিক্ষকদের নির্যাতন ও পদত্যাগে বাধ্য করছেন তারা। ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে আন্দোলনও গড়ে তুলছেন তারা। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব শিক্ষার্থী। এছাড়া পরীক্ষা পেছানোসহ নানা অযৌক্তিক দাবিও রয়েছে তাদের। শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয় কিংবা ক্ষোভে-অভিমানে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিচ্ছেন অনেক আত্মমর্যাদাশীল শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে অনেক শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ মারধরের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জোর করে পদত্যাগ করা অনেক শিক্ষক ভয়ে প্রতিষ্ঠানে আর যেতে পারছেন না। এমন অনেক শিক্ষক বেতন-ভাতাও পাচ্ছে না। এতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চলছে এমন অস্থিরতা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনো শিক্ষক অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাকে আইনানুগভাবে বিচার করা উচিত। কোনো অবস্থাতেই ছাত্ররা শিক্ষককে নিগৃহীত বা অপমান করতে পারে না। শিক্ষকদের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব ছাত্রদের নয়; এজন্য রয়েছে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকা উচিত, কারণ শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। পরিকল্পিতভাবে শিক্ষকের মর্যাদা এভাবে ধ্বংস করা মানে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করা বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। কেউ কেউ বলছেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলদাশ ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি ক্লাস ও পরীক্ষা থেকেও মনোযোগ হারাচ্ছেন তারা। এতে পড়াশোনাবিমুখ এক জাতি তৈরি করছেন তারা। একই সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামের অস্থিরতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে সেশনজট। শিক্ষার্থীদের সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানান তারা।

সারা দেশে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো সহস্রাধিক শিক্ষক এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছেন। এসব ঘটনায় ৬ জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির শিকার সারাদেশে ২৪০ জন শিক্ষককের তালিকা গণমাধ্যমে এসেছে। এরমধ্যে ১৮৮ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১১২ জনকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না ৫৯ জন। আর জোর করে অবসরে পাঠানো হয়েছে ১৭ জনকে। এছাড়া ১৮৮ জনের মধ্যে প্রায় ১০০ জনের বেতন বন্ধ রয়েছে। বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা কষ্টে জীবন-যাপন করছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এসব শিক্ষকের সমস্যা সমাধান করার কথা বললেও বিষয়টি ঝুলে আছে।

এছাড়া ৫ আগস্টের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজে অধ্যক্ষরা পদত্যাগ করেন। অনেককেই শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এরপর সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। একই সময় রাজধানীর তিতুমীর ও ইডেনসহ ২১টি সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছর ৮ এপ্রিল দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ মে সারা দেশের ৬৭টি সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শিক্ষক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রায় ৫ শতাধিক আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মিথ্যা-মামলার কবলে পড়ে অনেকে জেল-হাজতে আছেন। তারা পদ-বঞ্চিত হয়ে বেতন-ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। দেশজুড়ে এমন ঘটনায় বিবেকবান মানুষ বিস্মিত ও স্তম্ভিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *