ফিলিস্তিনসহ সারা বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে সংহতি জানাতে সমাবেশ করেছে আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চ।
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংহতি জানাতে সমাবেশ করেছে আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চ। এতে ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ছয়টি দাবি জানায় তারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরাইলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। যতদিন আমাদের প্রাণ থাকবে ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করব না। সুফি ঘরানার এ সমাবেশ ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ।
ফজরের নামাজের পর থেকেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আয়োজক কমিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য আবেদন করলেও প্রশাসন এতে অপারগতা প্রকাশ করে। অতঃপর গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি দেয়ার কথা বলা হয়। সর্বশেষ জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরেই ওই সমাবেশ আয়োজন করার অনুমতিপত্র ইস্যু করে প্রশাসন। গতকালের সমাবেশের নেপথ্য কারিগর ছিলেন পীরে তরিকত আল্লামা ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, আল্লামা এম এ মতিন, শায়খুল হাদিস প্রিন্সিপাল আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, স উ ম আবদুস সামাদ।
মাজারে হামলাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, সারা দেশে ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সুস্পষ্ট জুলুম ও অমানবিক কর্মকান্ড। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় ও সচেতন নাগরিক কখনোই এমন জুলুমকে সমর্থন করতে পারে না। পরবর্তীতে আর কোনো মাজারের ওপর যদি হামলা হয় তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের রুখে দেবো। পরে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশ শেষ হয়। আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চের সভাপতি ও মুসুরিখোলা দরবার শরিফের পীর শাহ হাসানুজ্জামান এই সংহতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন ইসলামী বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ, আল্লামা সৈয়দ নাসেরুল হক চিমতি, আল্লামা কাজি মাইনুদ্দীন আসরাফি, আয়োজক কমিটির মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, পীরে তরিকত আল্লামা হাবিব উল্লাহ বাগদাদী ও আল্লামা জসিম উদ্দিন আজহারী। আরো বক্তব্য দেন আনম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আযহারী। আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়।
দাবিসমূহ হচ্ছেÑ জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সব কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সরাসরি হস্তক্ষেপে এরই মধ্যে যত হত্যা হয়েছে সব হত্যাকা- ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল বাতিল ঘোষণা করতে হবে, ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা-অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই সমাবেশ থেকে মানুষদের তিনটি অঙ্গীকার করানো হয়। অঙ্গীকার তিনটি হলোÑ ইসরাইল ও ভারতসহ সব প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখব, আওয়ামী লীগসহ সব দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখব এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠীস্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকব। পরে নারিন্দার পীর সাহেবের মোনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।