খুলনার বটিয়াঘাটা শৈলমারী নদী প্রভাবশালী মহলের ব্যক্তিরা দখলের চেষ্টা চলছে।

সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারী নদী চারি পাশে ভরাট হয়ে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। উজানের পানির চাপ না থাকায় পলি জমে এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী বর্তমানে এ অবস্থায় পৌঁছেছে। অপরদিকে একের পর এক নদীর চর দখলের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদীর প্রশস্ততা। ফলে বর্ষায় পানির চাপে প্লাবিত হচ্ছে দুই পারের লোকালয়। দুর্ভোগ বাড়ছে দুই কূলের মানুষের।
জানা যায়, বটিয়াঘাটা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈলমারী নদী চলে গেছে পশ্চিমে দিকে ডুমুরিয়া উপজেলায় গিয়ে মিশেছে নদীর শাখা। বটিয়াঘাটা থেকে একটু পশ্চিম দিক এগোলে শৈলমারী খেয়াঘাট। শৈলমারী নদীর মুখে রয়েছে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেট। এরপরই নদী পারে বাঁধ দিয়ে দুই নদীর সম্মিলন স্থানে রয়েছে একটি ইটখোলা। এটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত এমপি শেখ নূরুল হক। এখন তার উত্তরাধিকাররা এটির মালিক। শৈলমারী নদীর মুখে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেটের ওখানে রয়েছে একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইস গেট তৈরি করেছে পাউবো। এখানে সঠিক সময় পানি সরবরাহসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব শরীফ শাওন, বটিয়াঘাটার নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত করে শৈলমারী নদীর খাস জমিতে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে জেলা প্রশাসক খুলনার কার্যালয়ের অভিযোগ শাখায় ৩টি ইটখোলার নাম উল্লেখ্য করে তথ্য প্রেরণ করে। এ ছাড়া নদীর দুই পাশে জেগে উঠা চর এক শ্রেণির ভূমিদস্যুসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাতারাতি দখল করে নিচ্ছে। এই নদীতে এক সময় ছিল প্রবল স্রোত। নদীর দুই পারের শত শত বিঘা জমি ও বসতির পানি গিয়ে পড়ত এই নদীতে। শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হতো এই নদীর ওপর নির্ভর করে। তবে এখন উজানের পানি না পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে বিপুল পলি জমেছে শৈলমারী নদীর বুকে। ফলে এ নদীর বেশির ভাগ অংশ ভাটার সময় পানি পুরোটাই শুকিয়ে যায়। এছাড়া যেখানে শৈল মারি খেয়াঘাট ছিল সেখানে এন কে বি বাটার মালিক প্রফুল্ল বাবু কাঠের একটি কি ব্রিজ তৈরি করেছে যার উপর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বড় গাড়ি ও মানুষ পারাপার হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮-১০ বছর ধরে আস্তে আস্তে এই নদীর মৃত্যু ঘটেছে। একসময় এই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা চালানো কঠিন ছিল। অথচ এখন ভাটার সময় পানি এত কমে যায় যে, নৌকা চালানোর উপায় থাকে না। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর দুই পাড়জুড়ে বিশাল চর। জোয়ার এলে ডুবে যায়, জোয়ার গেলে ফের ভেসে ওঠে। উপকূলীয় নদীগুলো প্রাকৃতিকভাবে জোয়ারের নিয়ন্ত্রণাধীন। উজানের পানিই এসব নদীর ভারসাম্য তৈরি করে। কিন্তু নদী ব্যবস্থাপনার নামে অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইস গেট নির্মাণ, ইটখোলা গড়ে তোলা নদী দখল ইত্যাদি কারণে মারা যাচ্ছে নদী। যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলাবাসীর দাবি, নদীটি খনন করে তার স্বাভাবিক চলাচলের পথ ফিরিয়ে দেওয়াসহ সব অবৈধ দখলদারকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি শরীফ শাওন, বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত করে ৩টি ইটখোলার অবৈধ দখলের তালিকা তৈরি করে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও যে সব ব্যক্তি চরদখল করছে তাদের তালিকা করা হবে এবং জেলা প্রশাসক যে নির্দেশ প্রদান করবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *