অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনি প্রশাসন সাজাচ্ছেন যে ভাবে
সেখ রাসেল, সহকারী দপ্তর সম্পাদক, অনলাইন ডেস্ক:
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কর্মকর্তারা এবার নিরপেক্ষতার পরিচয় দেবেন আর তত্ত্বাবধায়কের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ পেশাদারি দেখাবেন। কেননা তাদের কোনো রাজনৈতিক পিছুটান নেই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ জেলার দায়িত্বে থাকবেন ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) বড় একটা অংশ হবেন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও অন্য সময় নিয়োগ পাওয়া দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারাও থাকবেন কয়েকটি জেলায়। ইতোমধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে ধাপে ধাপে নির্বাচনি প্রশাসন সাজানোর কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানাগেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি ও এসপিদের পদে প্রাধান্য পাবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসি পদে রদবদল চাইলে এ তালিকা ধরেই করতে হবে। ডিসি-এসপির পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তালিকা তৈরিরও কাজ চলছে। সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য বিগত সময়ের ডিসি থাকা কর্মকর্তাদের চাকরি গেছে, শাস্তি হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কেউ পক্ষপাত করবে না, কেউ ঝুঁকি নেবে না। ভালো ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ পেলে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের পদায়ন করা শুরু হয়েছে। যেন জেলার সার্বিক অবস্থা বুঝে নিতে পারেন ওই কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও প্রয়োজনে ইসির নির্দেশনায়ও পরিবর্তন আনতে পারে সরকার। প্রশাসন সাজাতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে। যারা নির্বাচন দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন এমন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ বিভিন্ন তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাইবাছাই চলছে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরি করা হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে।
ইতোমধ্যে দুই মাস সময় নিয়ে ২৫ ও ২৭ তম ব্যাচের সাক্ষাৎকার শেষ করেছে। তবে এখনো ২৮ তম ব্যাচের সাক্ষাৎকার শুরুই হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামীর সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনে ডিসি ও আইনশৃঙ্খলার এসপির দায়িত্বে বেশির ভাগ থাকবেন ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়কের সময় নভেম্বর মাসে এই ব্যাচের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতে। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের সময় প্রথম ভাইভা দিয়ে উত্তীর্ণদের বিরুদ্ধে দলীয় অভিযোগ আনা হয়। পরে সেটি বাতিল করে সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ড. সা’দত হুসাইন পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২৭তম ব্যাচ পুনরায় দ্বিতীয় ভাইভা দিয়ে নিয়োগ পান। বর্তমানে ২৭তম ব্যাচের ১৩ জন কর্মকর্তা জেলার ডিসির দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় এসপির দায়িত্বে আছেন ১৭ জন কর্মকর্তা। এর বাইরে ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও আছেন। যারা সাবেক বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া। জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে মূলত তিনটি ব্যাচ। ২৫, ২৭ এবং ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের হাতে থাকবে পুরো জেলায় নির্বাচনের দায়িত্ব। এই তিনটি ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকবে ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারাই। এ ছাড়াও বিএনপির সময়ে নিয়োগ পাওয়া ২৫তম এবং আওয়ামী লীগ সময়ে যোগদান করা ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও থাকবেন অল্প পরিসরে। প্রশাসনে ইতোমধ্যেই ২৪তম ব্যাচের যারা ডিসির দায়িত্বে আছেন তাদের মাঠ থেকে তুলে আনা হবে। ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্মসচিব পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে ঈদের আগে শেষ হয় সাক্ষাৎকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে জনপ্রশাসন দক্ষ ও নিরপেক্ষ অফিসার ডিসির দায়িত্বে নিয়ে আসবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে এসপি পদে আরও কর্মকর্তা মাঠে দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২৭তম ব্যাচ অগ্রাধিকার পাবে বেশি। পাশাপাশি নির্বাচনের আগে ২৮তম ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকেও জেলায় এসপি পদে পদায়ন করা হতে পারে।