মৃত দুই শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে হলেন অধ্যক্ষ
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
দুটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে এক বছরের বেশি সময় আগে মারা যাওয়া দুইজন শিক্ষককে বসিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রসিকতা ও সমালোচনা চলছে। কর্মকর্তারাও এ নিয়ে বিব্রত।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ১৩৫ কলেজে অধ্যক্ষ পদে বদলিভিত্তিক পদায়ন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ তালিকায় দুজন মৃত শিক্ষকও রয়েছেন। দুজনের মধ্যে একজন হলেন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত বাবা অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা তিনটি আদেশ জারি করা হয়। এরই মধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। দুই বছর আগে মারা যাওয়া অধ্যাপককে কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা তিনটি আদেশ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৩৭ জনের তালিকায় ১৩ নম্বরে থাকা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে অধ্যাপক জামাল উদ্দীনকে অধ্যক্ষ পদে মীর ইসমাইল হোসেন কলেজে পদায়ন করা হয়। তিনি মারা যাওয়ার আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
অধ্যাপক জামাল উদ্দীনের স্ত্রী ও সাবেক স্কুলশিক্ষিকা তাহমিনা শবনম আক্ষেপ করে বলেন, মেয়ের চলে যাওয়া, তার বিচার না পাওয়া এবং মেয়ের আগে তার বাবার মৃত্যু সব মিলিয়ে আমি আর নিতে পারছি না। আমার স্বামী তার প্রাপ্য সুসংবাদ দেখে যেতে পারলেন না। তিনি বলেন, একই ঘটনা ঘটেছে আমার মেয়ের বেলায়ও। আত্মহননের দুমাস পর গত বছরের ১৯ মে অবন্তিকার স্নাতকের (এলএলবি অনার্স) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে অবন্তিকা।
তিনি আরও বলেন, তালিকা প্রকাশের পরই আমি পদায়নের বিষয়টি জানতে পারি। অবনন্তিকার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকতা ছাড়াও অন্য সাতটি সংস্থায় চাকরির সুযোগ পেয়েও তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন। জীবনে তোষামোদি-তদবির করতেন না বলেই অধ্যক্ষ পদে তাকে পদায়ন করা হয়নি। তিনি মারা যাওয়ার দুমাস পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পদোন্নতির বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে চায়। আমি বলেছিলাম- তিনি মারা গেছেন। এরপরও হয়তো ভুল করে আমার মৃত স্বামীকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তাহমিনা শবনম বলেন, আমার মেয়ে অবন্তিকাও বাবার মতো মেধাবী ছিল। সে পাইলটে সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ওর ইচ্ছে ছিল বিচারক হওয়ার। তাই আইন পড়েছিল। মৃত্যুর কিছুদিন আগে অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী ছাত্রলীগ ক্যাডার আম্মান সিদ্দিকী ও অন্যতম সহযোগী সহকারী প্রক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে হয়রানি ও নিপীড়নের নানা অভিযোগ করেন। মামলা পরবর্তীতে আত্মহত্যার প্ররোচনার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়। বর্তমানে উভয় জামিনে মুক্ত। আমার করা মামলা এখন নিশ্চুপ পড়ে আছে। এক বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। অধিকন্তু মামলার আলামত নষ্ট করেছে পুলিশের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শিবেন বিশ্বাস। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের তিনটি তালিকার একটির ৩৭ জনের তালিকায় ১৩ নম্বরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে অধ্যক্ষ পদে মীর ইসমাইল হোসেন কলেজে মো. জামাল উদ্দীনকে পদায়ন করা হয়। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল মারা যান।
গত বছরের ১৫ মার্চ রাতে অপমান সইতে না পেরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁয়ের বাসায় আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও অধ্যাপক জামাল উদ্দীনের মেয়ে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। অবন্তিকার আত্মহত্যার খবর রাতেই ছড়িয়ে পড়লে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে। কুমিল্লাসহ সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরেরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন মা তাহমিনা বেগম। দেশ শান্ত করতে মামলার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে। মামলায় তাদের দুজনকেই প্রধান আসামি করা হয়েছে।