সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্রলীগের ‘হেরোইঞ্চি বাবু’ এখন যুবদল নেতা!
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিদ্ধিরগঞ্জে পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা ভোগ করা সাইদুল ইসলাম বাবু ওরফে ‘হিরোইঞ্চি বাবু’ নামে এক ব্যক্তি হঠাৎ পুরোদস্তুর যুবদল নেতা হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের প্রভাবে দখলবাজি ও প্রভাব বিস্তারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বাবুর অগণিত ছবি ছড়িয়ে পরেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জানা যায়, সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডে যুবদলের এক কর্মীসভায় যোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম বাবু। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল এবং সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ সহ মহানগর ও থানা যুবদলের নেতৃবৃন্দ। ওই সভায় বাবু বক্তব্য রাখেন এবং মহানগর নেতাদের ফুলের তোড়া উপহার দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের একাধিক নেতাকর্মী এই প্রতিবেদককে জানান, বাবু বিগত দিনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সমাবেশে লোকবল সাপ্লাই দিত। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর সাকিব, ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম শরীফ সহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের বহু নেতাকর্মীর সাথে অন্তরঙ্গ সখ্যতা ছিল সাইদুর রহমান বাবু ওরফে ‘হিরোইঞ্চি বাবু’র। উল্লেখ্য, এদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা হাবিব জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামী। সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের সাথে বাবু’র বেশকিছু ছবি পোস্ট করে আমিনুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘আওয়ামী দোষরদের দিয়ে কমিটি করা হবেনা এই কথা সবার মুখে মুখে। কিন্তু বাস্তবে এই আওয়ামী দোষরকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল আসলেই প্রশ্রয় দেয় কিনা তা এবার দেখার বিষয়! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য রিয়াজুল আলম ইমন এবং ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি পদপ্রার্থী শওকত আলী রিয়েলের শেল্টারে ৫ আগস্টের পরে যুবদল নেতা বনে গেছেন এই বাবু। তিনি এখন ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশি। ইমন ও রিয়েলের মদদে বাবু এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাবুর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে স্বৈরাচারের রোষানলে পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পালিয়ে বেড়াতেন, তখনও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতার কারণে এলাকায় বহাল তবিয়তেই ছিলেন বাবু। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে বাবু চুপিসারে ছাত্রলীগ থেকে সরে গিয়ে যুবদলে যোগ দেন। আর হীনস্বার্থে তাকে যুবদলে এনেছেন মহানগর যুবদল নেতা ইমন এবং ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি পদপ্রার্থী রিয়েল। ইমন এবং রিয়েলের সাথেও বাবুর অসংখ্য ছবি রয়েছে, যা এখন ফেসবুকে ঘুরছে। তাদের কল্যাণে রাজনৈতিক পরিচয় বদলে বাবু এখন যুবদল নেতা হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন। তবে বাবুর অতীত অপকর্ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকায় তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, বাবু ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যেভাবে নানা অনিয়ম করেছেন, এখন যুবদলে যোগ দিয়ে একই কৌশলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চাইছেন। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইদুল ইসলাম বাবুকে কল করলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন যে তিনি বাবু না। তারপর আবারও কল করে তিনিই যে বাবু এটা জোর দিয়ে বলার পর তিনি স্বীকার করেন। তখন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ট ঐসকল ছাত্রলীগ নেতারা তার বন্ধু জানিয়ে বাবু বলেন, ‘তারা আমার বন্ধু। এজন্য তাদের সাথে ছবি থাকতেই পারে।‘ এছাড়া অস্ত্রধারীদের সাথে তার ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান।