ধর্ষণের শিকার হয়ে ঝরেই গেল ‘ছোট্ট ফুল’ আছিয়া। মামলাটি দ্রুত শেষ করার আশ্বাস দিলেন: আইজিপি
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা।
হেলিকপ্টারে নেওয়া সবুজ কাপড়ে মোড়ানো কফিন। ৮ বছরের ছোট্ট শিশু আছিয়া খাতুন চির নিদ্রায় ‘ঘুমে’। মমতামাখা হাতে সেই কফিন স্পর্শ করছিলেন মা আয়েশা আক্তার। আর কখনও ঘুম ভাঙবে না বুকের নিধি আছিয়ার।
সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর ১টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেদনার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সিএমএইচ থেকে আছিয়ার কফিন নেওয়া হয় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ যায় মাগুরায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষে শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডিতে আছিয়াকে দাফন করা হয়। এদিকে গতকাল রাতে শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
আছিয়ার মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলো– শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিএমএইচের হিমঘরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন আছিয়ার মা আয়েশাসহ স্বজনরা। আয়েশাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও বারবার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করতে করতে আয়েশা বলতে থাকেন, ‘আমার নাবালক সোনামণিরে যেভাবে বেলেড দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেছে, ঠিক সেরকম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। এতটুকু আবদার। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ও রকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।’
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মামলাটির তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এদিন দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, মাগুরায় নিপীড়নের শিকার শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পোস্টে বলা হয়েছে, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।