সিলেটের জাফলংয়ে চলছে পাথর হরিলুট, নেপথ্যে বিএনপির পদ-পদবীর নেতাকর্মীরা

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে পাথর কোয়ারীতে চলছে পাথর হরিলুট, নেপথ্যে বার বার বিএনপির পদ পদবীধারী নেতাকর্মীদের নাম উঠেছে। এবার বিগত আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর পরই প্রকাশ্যেই চলে আসেন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলামের। পাথরের সম্পেদ ভরপুর সিলেটে জাফলংয়ের কোয়ারী ও তামাবিল স্থলবন্দরে গড়ে তোলেন আধিপত্য। যদিও বৈধ পথে পাথর উত্তলন বন্ধ। কিন্তু সেই পাথরই উঠছে অবৈধ ভাবে রাতে আধারে। স্থানীয় প্রশাসন পাথর বন্ধে দিনে তৎপর, সেই প্রশাসন রাতে মিলেমিশে পাথর খেকোদের দলে। এভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সিলেটের জাফলংয়ের সম্পদ। ইতিমধ্যে ফেলুডার মেশিন দিয়ে জাফলংয়ে জুম পাহাড় কাটায় হুমকির মুখে স্থানীয় শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দির,ফসলী জমি, বাগান ও বসতবাড়ি। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বল্লাঘাট মন্দিরের জুম পাড় নামক স্থানে ঘটছে এহেন অবৈধ কর্মকান্ড। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুঠপাটের ঘটনা ঘটে। শুধু জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়। পাথর লুট-পাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.বদরুল হুদা বাদী হয়ে পৃথক-পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে পাথর লুট-পাটকারী মামলার আসামীরা এখনো রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। বরং তারা বেপরোয়া হয়ে জড়িয়ে পড়েছে পাথর লুটে।
পতিত আওয়ামীলীগের দোস’র বিগত সময়ে জাফলংয়ে লুটপাট করে হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সরকার পতনের পর আশ্রয় নেয় স্থানীয় বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতাদের ছায়াতলে। মোঠা অংকের আর্থিক দফারফায় পতিত দোসরদের আশ্রয় প্রশয় দিয়ে বেপরোয়া করে তুলেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের শ্লেটারে পাথর লুটের নায়করা এখন পুনর্বাসিত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে পাথর লুট সহ সীমান্তে চোরাচালানের মতো অবৈধ কর্মকান্ড। এই কর্মকান্ডের নেপথ্য হোতা হিসেবে ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য বিএনপি নেতা মো.রফিকুল ইসলাম শাহপরান। ইতিমধ্যে তাদের বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কারের পর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
তাদের সহযোগী শ্রমিক লীগ ও ট্রাক শ্রমিক নেতা, ছাত্র-জনতার পৃথক তিনটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সবেদ উরফে সবেদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি লুটতোরাজ বাহিনী। এই বাহিনীর আজগর, আলাল, জাহিদ শাহপরানের হয়ে সকাল থেকে ভোর পর্যন্ত জাফলং এলাকার প্রতিটি নৌকা, শ্যালো মেশিন, পাথর-বালু বাহি গাড়ি, কোয়ারীর গর্ত থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা উত্তোলন করে আসছে।
শাহপরান ও ছমেদ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি, মন্দির’র জুমপাড়,জিরোপয়েন্ট,বাবুল’র জুম এলাকা, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জাফলং সেতু সংলগ্ন পাথর কোয়ারী এলাকায় অবৈধ ভাবে দানবযন্ত্র ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের চলছে মহোৎসব। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার। বরং তাদের মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপিপন্থি কিছু আইনজীবী। মামলা চালানের মাধ্যম বহিস্কৃত নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে, বিভিন্ন ভাবে আশ্রয় প্রশয় দিয়ে বাচিয়ে রাখছেন প্রশাসনের ধরপাকড় থেকে। অথচ তাদের অবৈধ কর্মযজ্ঞে ফেলুডার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে জুমপাড় এলাকায় শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দির,বল্লাঘাটের পুরাতন পর্যটন স্পট, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, শত হেক্টর ফসলী জমি, চা বাগান,জাফলং সেতু,জাফলং বাজার,নয়াবস্তি,কান্দুবস্তী গ্রামের বসতবাড়ি ও খাসিয়া সম্পাদায়ের,পান সুপারীর বাগান সহ আশ পাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। আশঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের দখলবাজ, লুটেরাদের পূর্ণবাসনে মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। ওই সময় গুঞ্জন ছড়ায় ৬ আগস্ট রাতে এক বৈঠকে লুটেরাদের আশ্রয় দেয়ার শর্তে ২ কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। সেই সাথে তাদের ব্যবসা বানিজ্য নিজের হেফাজতে নিয়ে নেন তিনি। ওই লুটেরা গোষ্টি ছিল সিলেট -৪ আসনের সাবেক এমপি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের মানি মেকার। সরকার পতনে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ায়, সেই সুযোগে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা শাহপরান হয়ে উঠেন ওদের মাথার ছায়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোকজন জানান,পাথর খেকোদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের মোটা অংকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় ঘটছে এহেন অবৈধ কর্মকান্ড। পতিত আওয়ামীলীগের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সাথে ও বিএনপি স্থানীয় নেতাকর্মীরা মিলেমিশে বীরদর্পে ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তারা অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ চলমান রেখেছে। দলের নীতি নির্ধারকদের চোখে এড়িয়ে কৌশলে আ’লীগের নেতাকর্মীদের সামনে রেখে মূলত এই কর্মকান্ডে নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপির লোকজন। থানা পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। অভিযানিক দল ঘটনাস্থল পৌঁছানোর আগেই আগাম খবর চলে যায় পাথর খেকো চক্রের কাছে। যে কারণে বল্লাঘাট জুম পাড় এলাকায় মন্দিরের মাটি কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৈচিত্র্যের কাল্পনিক দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের অভয়রণ্য জাফলং। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ ও প্রকৃতি কন্যা জাফলং এর প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত ছুঁটে আসে ভ্রমণ পিপাসু হাজারও পর্যটক। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং তার নিজস্ব রূপলাবণ্য।
শুক্রবার (৭ মার্চ)দুপুরে স্থানীয় ছাত্র জনতা ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের বহুল আলোচিত জুমপাড়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিক্ষোভ মিছিল ও পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাফলং বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে কান্দুবস্তি সংলগ্ন জুমপাড়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধে গিয়ে পথ সভায় মিলিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, জাফলংয়ের বহুল আলোচিত জুমপাড় এ অবস্থিত গ্রাম প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ এর দুই পাশে যন্ত্র দানব এক্সেভেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করার ফলে আসন্ন বন্যায় নদীর পানির ¯্রােতে এই বেরিবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একাধিক গ্রাম রক্ষার এই বাঁধটি বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১০টির ও অধিক গ্রাম, স্কুল, কলেজ, বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন পাথর উত্তোলন বন্ধে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে যা প্রতিবাদী জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হয়। অভিযানিক টিমের সামনে যন্ত্র দানব থাকলেও তারা না দেখার বান করে চলে যায়। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতায় বেরিবাঁধের দুই পাশ থেকে পাথর উত্তোলন করায় গুটি কয়েক জনের সুবিধা হলেও বৃহৎ এলাকাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ না করলে ছাত্র সমাজ আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দাবি গুলো হলো, ৭২ ঘন্টার মধ্যে বেড়িবাঁধ এর চার পাশের বিশাল গর্ত গুলা ভরাট করতে হবে। জাফলং এর আবাসিক গ্রাম ও ফসলি জমিকে ক্ষতবিক্ষত করে যে পাথর কোয়ারি করার ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তা বন্ধ করতে হবে। জাফলং জুমপাড় বেড়িবাঁধ এর আশে পাশে কখনো কোন এস্কেবেটার, বোমা মেশিন আশে পাশে রাখা যাবে না এবং ৭২ ঘন্টার মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি অপসারণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *