নগরীতে সম্প্রতি সংঘঠিত হত্যাকান্ড সম্পর্কিত মিডিয়া ব্রিফিং

বিভাগিয় পতিনিধি
এম এ জলিল
খুলনা

KMP HQ MEDIA CELL [25 FEBRUARY 2025]
খুলনা মহানগর পুলিশ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী, হত্যাকান্ডে জড়িত ও কুখ্যাত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ আলামিন শেখ৥ ইমনকে মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা আসামীরা চুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই রাজিবুল ইসলাম বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা নং-২৪, তারিখ-২১/০২/২০২৫ খ্রি:, ধারা-৩০২/৩৪ রুজু করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে অল্প সময়ের মধ্যে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সমর্থ হয়েছে এবং ইতোমধ্যে আসামী বিশ্বজিৎ সাহা (৪৩), পিতা-মৃত: মতিলাল সাহা, সাং-বনগ্রাম শ্রীপুর, থানা-মোড়েলগঞ্জ, জেলা-বাগেরহাট; এপি সাং-পূর্ব বানিয়াখামার লোহার গেট, থানা-খুলনা সদর, জেলা-খুলনাকে গ্রেফতার করেছে। মূলত আসামী বিশ্বজিৎ সাহার ভিকটিমের স্ত্রীর সাথে পরোকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে আলামিন শেখ৥ ইমনের হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত হয়েছে।

খুলনা বড় বাজারের ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার ভিকটিমের স্ত্রী লামিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক এবং এক পর্যায়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইমন ঘটনাটি জেনে ফেলে এবং বিশ্বজিৎ শাহাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর ফলে ইমনকে শায়েস্তা করার জন্য বিশ্বজিৎ শাহা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্টানের পূর্বের কর্মচারী নাইম ও মুন্সিকে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করে। ঘটনার দিন সকাল ০৮.০০ ঘটিকার সময় তিনি, নাইম ও মুন্সী, ট্রাকস্ট্যান্ড কাঁচা বাজারের সামনে উপস্থিত হন। এসময় আল আমিন @ ইমন মোটরসাইকেলযোগে সোনাডাঙ্গা থানাধীন ২২ তলা ভবনের সামনে এসে পৌঁছালে বিশ্বজিৎ সাহা ইমনকে চিনিয়ে দিলে মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় নাইম ও মুন্সি আল আমিন @ ইমন এর পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আল আমিন@ ইমনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার তেঁতুল তলা মোড় এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব সরকারকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় অর্ণবের পিতা নিতিশ শীল বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা নং-২৬, তারিখ-২৫/০১/২০২৫, ধারা-৩০২/৩৪ রুজু করা হয়। নগরীর আলোচিত এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সোনাডাঙ্গা থানায় একাধিক চৌকস টিম প্রস্তুত করা হয়। গত এক মাস যাবৎ পুলিশ ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে অর্ণব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সমর্থ হয়েছে। ইতমধ্যে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ এই মামলার ৯ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে সন্ত্রাসী ইনসান শরিফকে ১ টি ওয়ান শ্যূটার গান, ২ রাউন্ড গুলি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ১ টি মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের মধ্য শাহরিয়ার সজল ও মাহিন হোসেন শুভ, অর্ণব সরকার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বাকি আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান না করলেও পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং মামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। মূলত সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত হয়েছে।

আলোচিত অর্ণব সরকার হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন ১) মোঃ গোলাম রব্বানী (২৬), পিতা-মোঃ রবিউল ইসলাম, সাং-ইসলামকাঠি, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা, এ/পি সাং-গোবরচাকা, থানা-সোনাডাঙ্গা মডেল, ২) রমজান শেখ (২৯) পিতা-খোকন শেখ, সাং-পুটিখালী, থানা-বাগেরহাট সদর, জেলা-বাগেরহাট, এ/পি সাং-আদর্শপল্লী, থানা-সোনাডাঙ্গা মডেল, ৩) জাহিদুল ইসলাম তুরান (২০) পিতা-মোঃ আরিফুল ইসলাম, সাং-মুন্সীপাড়া ১ম গলি, থানা-খুলনা সদর, ৪) সাইফুল গাজী (৩২) পিতা-মৃত: মাগরিব গাজী, সাং-আইডিয়াল কলেজ রোড, থানা-সোনাডাঙ্গা মডেল, ৫) জাহিদুল ইসলাম রাজ@ রাজ উজ্জামান রাজু @ রিপন ইসলাম গালকাটা রাজু (৩৫), পিতা-মৃত: ইউনুস শেখ@ ইউনুস হাওলাদার, সাং-মহিষকান্দি, থানা-কাঠালিয়া, জেলা-ঝালকাঠি, এ/পি সাং-শিপইয়ার্ড মেইন রোড মতিয়াখালী, থানা-লবণচরা, ৬) ইনসান শরিফ (২৯), পিতা-মোশারফ হোসেন, সাং-সোনাডাঙ্গা আবাসিক, থানা-সোনাডাঙ্গা, ৭) আতিক হাসান @ বান্না (২৫), পিতা-মেহেদী হাসান, সাং-শরীফাবাদ দক্ষিণ টুটপাড়া, থানা-খুলনা সদর, ৮) শাহরিয়ার সজল (২২), পিতা-মোঃ নুরুল ইসলাম, সাং-মোজাহিদ পাড়া, থানা-লবণচরা এবং ৯) মাহিন হোসেন শুভ (২১), পিতা-মোঃ কামাল হোসেন, সাং-আব্দুল বারী ইষ্ট লেন টুটপাড়া, থানা-খুলনা সদর, খুলনা। উল্লেখ্য যে, থানার রেকর্ডপত্র এবং সিডিএমএস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে আসামী গোলাম রব্বানী এবং আতিক হাসান @ বান্নার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই, অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে কিনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *