টিসিবির ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
নির্দিষ্ট স্থানে টিসিবির ট্রাক পৌঁছাতেই লাইনে জায়গা ধরে রাখতে অপেক্ষারত পণ্যপ্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি-ঠেলাঠেলি। বিক্রি শুরু হতেই অল্প সময়ের মধ্যে ফুরিয়ে যায় পণ্য। পণ্য পেতে অনেকেই আবার উঠে পড়ছেন ট্রকের ওপর। লাইনের পেছনে পড়ে যারা পণ্য পাননি, তাদের সামাল দিতেও বেগ পেতে হচ্ছে বিক্রয়কর্মীদের। হুটহাট ঘটছে হাতাহাতির ঘটনা। গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থিত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলার ট্রাকের সামনে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এক মাস বন্ধ থাকার পর নিম্নআয়ের মানুষের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালু করেছে টিসিবি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে করে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তাই প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার টিসিবি ট্রাক দেখলেই ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু পণ্যের চেয়ে পণ্যপ্রত্যাশীদের সংখ্যাই বেশি। তাই অনেককেই পণ্য না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

গতকাল টিঅ্যান্ডটি কলেজের সামনে টিসিবির ট্রাক আসার খবরে ছুটে আসেন আশপাশের শত শত মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে দেখা যায় ট্রাককে ঘিরে মানুষের ঠেলাঠেলিতে দিশাহারা দশা ডিলার ও তার বিক্রয়কর্মীদের। পণ্য পেতে বিক্রয়কর্মীদের কাছে আকুতি করছেন সবাই। কেউ আবার উঠে পড়ছেন ট্রাকের ওপর। এর মধ্যে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন কেউ কেউ।

কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী আক্ষেপ করে বলেন, ট্রাকের সামনে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়ায়ে থাইকাও পণ্য পাই নাই। এতকরে হাত-পা ধরলাম দিল না। মহিলা মানুষ হইয়াও এত ভিড় ঠেইলা ধাক্কাধাক্কির মধ্যে দাঁড়াইয়া থাকলাম। কিন্তু কিছুই পাইলাম না। কষ্টটাই বৃথা গেল। আর্থিক অবস্থা ভালো এমন অনেকেই আগভাগে পণ্য নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু আমরা গরিবরা পাই না।

পাশের আরও কয়েকজন পণ্যপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, টিসিবির ট্রাক কখন কোথায় আসবে, সেটি জানানো হয় না। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তার ওপর লাইনে দাঁড়ানো অল্প বয়স্করা গায়ের জোরে টোকেন নিয়ে নেয়। মহিলা, বয়স্করা পিছিয়ে পড়ে বা টোকেন পায় না। তারা আরও অভিযোগ করেন, ট্রাক এলেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এর ওপর অনেক সচ্ছল ব্যক্তিও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করে। আবার অনেকে পরিবার নিয়ে লাইনে দাঁড়ায়। এক পরিবারের একাধিক সদস্য পণ্য নেয়, কিন্তু অনেক পরিবারের একজনও পায় না। তা ছাড়া আশপাশের দোকান, হোটেল থেকেও মানুষ এসে লাইনে দাঁড়ায়। এতে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে।

টিসিবির ট্রাক সেল থেকে এক ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এসব পণ্য কিনতে ব্যয় হয় ৫৮৮ টাকা। বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে অনেক বেশি খরচ হয়। তাই টিসিবি পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু বরাদ্দ সে তুলনায় অনেকটাই কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *