শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদী দলের কারও সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান

প্রধান প্রতিবেদক,
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদী দলটির নেতা এবং অন্য কারও সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পত্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আর কোনো হামলা হবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই হামলা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি সম্পত্তির ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের ক্ষোভ বোঝা যায়। কারণ তারা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন শেখ হাসিনার শাসনামলে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’

তিনি বলেন, এগুলো তাদের এতদিনের ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। সরকার তাদের এই অনুভূতিকে বুঝতে পারছে। এমনকি ভারতে বসে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কারে বাধা দিচ্ছেন তাও মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। শেখ হাসিনার এসব কার্যকলাপের কারণেই জনগণের মনে ক্ষোভ বাড়ছে এবং এমন হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

ড, ইউনূস বলেন, ‘সরকার এই ক্ষোভের বিষয়টি উপলব্ধি করছে, কারণ ‘‘নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও হাসিনা তার উগ্র কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তার শাসনের নিপীড়ন থেকে বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার হতে না পারে।”’

তবে এই পরিস্থিতি বোঝার পরেও সরকার দেশবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, যাতে বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ হয়, ‘আমরা একটি আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা জাতি।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা নতুন বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের পুরনো বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আসুন, বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে না ফেলি; আইনের প্রতি যে কোনো অবহেলা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।’

অধ্যাপক ইউনূস বিবৃতিতে বলেন, ‘যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছে এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের পথে এগিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে দেশের মানুষ ও বিশ্বের বন্ধুদের সামনে প্রমাণ করতে হবে- আমার একে-অপরের নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অটল ও অবিচল।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশের নাগরিকরা কখনো এমন কাজ করতে পারেন না, যে কারণে উৎখাত হওয়া স্বৈরশাসকের আচরণের সঙ্গে তাদেরকে তুলনা করার সুযোগ পায়।’

সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা যায় এবং সকল বাংলাদেশির জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা যায়।’ বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালায়, তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, বিশেষ করে সম্পত্তি ধ্বংসের মাধ্যমে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।সরকার দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

স্বৈরশাসকের সহযোগী নেতৃবৃন্দ দেশকে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যতদিন দেশের মানুষ সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের নৈতিকতা বজায় রাখবে, ততদিন তাদের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদীদের সম্পত্তির ওপর যে কোনো হামলা তাদের জন্য একটি অজুহাত হয়ে দাঁড়ায়, যা তারা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং তাদের মিথ্যা গল্প প্রচার করতে ব্যবহার করবে। আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছি। সমগ্র বিশ্ব আমাদের পাশে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিশ্ববাসীর কাছে ভুল বার্তা যাবে।’

বিবৃতিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে, যেখানে সকল বাংলাদেশি নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। এজন্য সকলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।’

এর আগে আরেক বিবৃতিতে সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে।

এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *