শ্রমিক লীগ ফিরল শ্রমিক দল হয়ে
প্রধান প্রতিবেদক
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) শাখার একটি কমিটি থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক লীগ নেতাদের নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করার খবর পাওয়া গেছে। কেজিডিসিএল শাখা শ্রমিক দলের এই ‘অতিরিক্ত কমিটিতে’ শাখা শ্রমিক লীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ ভুলুকে সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। এ অবস্থায় একই শাখায় শ্রমিক দলের দুটি কমিটি, শ্রমিক লীগ নেতাদের শ্রমিক দলে অন্তর্ভুক্ত করে সরাসরি নেতৃত্ব তুলে দেওয়া এবং নতুন কমিটি ঘোষণার মাত্র তিন মাসের মাথায় সেটি বিলুপ্ত না করে আরেকটি কমিটি করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
জানা গেছে, মাত্র তিন মাস আগে গত ২ নভেম্বর কেজিডিসিএল শাখার শ্রমিক দলের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর সভাপতির দায়িত্বে আছেন মো. মুছা খালেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন রমিত বড়ুয়া। তারা দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে ভুলু, মহিউদ্দিন ও শরিফুলের মতো শ্রমিক লীগ নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি করা হলো। অথচ এই তিনজনের মধ্যে শরিফুল নিজেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলের ভাতিজা পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়েছেন। তবে নতুন অতিরিক্ত কমিটি নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করছে কেন্দ্র। চট্টগ্রামের নেতারাও স্বীকার করছেন না।
শ্রমিক লীগ থেকে শ্রমিক দলের শাখার নেতৃত্বে আসা এই তিন নেতা দাবি করছেন, স্বৈরাচার সরকারের চাপে তারা শ্রমিক লীগে ছিলেন। শ্রমিক লীগে থাকলেও কমিটির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। তাদের মধ্যে ফিরোজ আহমেদ ভুলু দাবি করছেন, তারা শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন হয়নি। কমিটি গঠনের বিষয় সত্য নয়। তবে তারা নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে সিবিএ নির্বাচন ও শ্রমিক লীগের ব্যাপারে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ভুলুর সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ আমাদের সময়ের হাতে রয়েছে।
কেজিডিসিএল শাখা শ্রমিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের অন্ধকারে রেখে আরেকটি কমিটি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক দলের একটি শাখা কমিটি এবং বিএনপিপন্থি শ্রমিক কর্মচারী সংসদ থাকার পরও শ্রমিক লীগ নিয়ে কেন কমিটি গঠন হলো সেটি তাদের বোধগম্য নয়। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমন অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, কেজিডিসিএলে শ্রমিক কর্মচারী সংসদ বিএনপিপন্থি এবং শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগপন্থি হিসাবে পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেজিডিসিএল শাখা শ্রমিক দল এবং বিএনপিপন্থি সংগঠন শ্রমিক কর্মচারী সংসদ থাকার পরও সেখানে শ্রমিক দলের আরেকটি কমিটি করা বিস্ময়কর।
জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর কেজিডিসিএল শাখার শ্রমিক দলের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর সভাপতির দায়িত্বে আছেন মো. মুছা খালেদ। একই সঙ্গে তিনি বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সুপারিশে এই কমিটি অনুমোদন পেয়েছিল।
কেজিডিসিএলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে সেখান শ্রমিক লীগ দুটি অফিস দখল করেছিল। সিবিএ অফিসের পাশাপাশি আরেকটি কক্ষ দখল করে শ্রমিক লীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। বর্তমানে সিবিএ অফিস দখলে রাখলেও দলীয় অফিসে কেউ আসছে না।
অভিযোগ ওঠেছে, সিবিএ অফিসে বসেই স্বৈরাচারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সেই এজেন্ডার অংশ হিসাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শ্রমিক লীগের তিন নেতাকে শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। যাতে পুরো কমিটির নেতারা নিরাপদে দল বদল করতে পারে। এতে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নুর উল্লাহ বাহার। তবে নাজিম উদ্দিন দাবি করেছেন, কমিটির আবেদন এখনও পর্যালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। নুর উল্লাহ বাহারের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে কল দিলেও সাড়া মিলেনি।
মুছা খালেদ আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সুপারিশে আমাদের কমিটি অনুমোদন পেয়েছিল। শ্রমিক লীগের অপতৎপরতা সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর, বিভাগীয় শ্রমিক দল ও কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তারা এসব কর্ণপাত করেনি। কোনো অদৃশ্য শক্তির বলে শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের বদলি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক লীগ নেতাদের শ্রমিক দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
শ্রমিক লীগের কমিটি দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়ে কেজিডিসিএল শাখা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রমিত বড়ুয়া বলেন, বিএনপি করার কারণে আমাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এখনও আমরা শাস্তিভোগ করছি। আমাদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন করেছিল শ্রমিক লীগ; এখন তাদেরকে শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক দলের একজন কর্মচারী আমাদের সময়কে বলেন, অভিযান শুরু হলে ঘরে থাকতে পারতাম না; পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ২০১৮ সালে আমাকে না পেয়ে আমার ভাতিজাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আর এখন আমাদের দলই তাদের অন্তর্ভুক্ত করল। এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে। তিনি বলেন, এভাবে হাইব্রিডদের দলে নিয়ে আসলে প্রকৃত বিএনপি কর্মীরা হতাশ হয়ে ঘরে ঢুকে যাবে। দুঃসময়ে তাদের পাওয়া যাবে না। তখন বর্তমান পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।
এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ থেকে আসা ফিরোজ আহমেদ ভুলু বলেন, কেজিডিসিএলে শ্রমিক লীগ কখনও সক্রিয় ছিল না। সেখানে একটা পকেট কমিটি ছিল মাত্র। সেই পকেট কমিটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়; সে কারণে অনেক কিছু হয়তো করতে হয়েছে। সরকারের সঙ্গে মিলে থাকতে হয়েছে।’ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের কাছে শ্রমিক দলে পদ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে ব্যস্ত আছেন বলে জানান। ‘পরে কখন ফোন দেব? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আসলে এখন এগুলো ছাড়া আর কোনো কথা নাই। তাই আমি খুব বিরক্ত, দয়া করে মাফ করে দেবেন।’