লাইভে এসে বায়েজিদের ওসিকে পেটানোর হুমকি সন্ত্রাসী সাজ্জাদের
বিশেষ প্রতিনিধি:
বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (ওসি) আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিলেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১৪টি মামলা রয়েছে নগরীর বিভিন্ন থানায়। পুলিশের খাতায় সাজ্জাদ একজন দুর্ধর্ষ দাগি সন্ত্রাসী।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে নগরীর বায়েজিদ থানার কুলগাঁও খলিল শাহ মাজার সংলগ্ন একটি বাড়ির দোতলা থেকে ছয় যুবককে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ছয় যুবক ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের অনুসারী। এর পরপরই গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার সময় ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ওসিকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ।
১৯ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের লাইভে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। কতগুলো ছেলেকে ধরে বলছে তারা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল; ওরা নাকি আমার সহযোগী। আমি তৃতীয় শ্রেণির কোন লোকের সাথে চলাফেরা করি না। তিনি বলেন, ওসি আরিফ আমার স্ত্রীর গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করেছে। তার বিরুদ্ধে আমার স্ত্রী আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আদালত ওসি আরিফের বিচার করলে ভালো। আর আদালতে বিচার না পেলে আমি নিজেই আমার সন্তান হত্যার বিচার করবো। কে জিতে দেখি।
তিনি আরও বলেন, ওসি আরিফ আমার ছেলেদের গণপিটুনি খেয়ে মরে যাবে, তখন কেউ আমার দোষ দিতে পারবেন না। আমার স্ত্রীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে ওসি। আমি ধোয়া তুলসী পাতা নই। তবে আমার নামে ওসি যা বলছে তা ভুল। তিনি পুলিশ না হলে তাকে কুত্তার মতো পিটাইতাম। শুধুমাত্র আইনকে সম্মান করছি।
নগর পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফের বিরুদ্ধে সব ঘটনা ভালোভাবে তদন্ত করুন। তিনি আমার নামে যা বলছে তা সঠিক নয়। নির্বাচিত সরকার আসলে আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করবো।
জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, সাজ্জাদের লাইভে এসে হুমকি দেয়ার ভিডিও আমি দেখেছি। এতে আমি ভীত নই। চিহ্নিত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে আমি থানায় একটি জিডি করেছি।
গত ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন এলাকায় একটি বাসায় সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। গুলি করতে করতে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও শারমিন আক্তার নামে এক নারীকে ধরে আনে পুলিশ। তাকে ৬ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। একদিন পর ৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান ওই নারী।
শারমিন আদালতে দায়েল করা মামলায় উল্লেখ করেন, সাজ্জাদ তার স্বামী। সাজ্জাদকে না পেয়ে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। থানায় তাকে বেধড়ক মারধর করা হলে তার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। মামলায় বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আইনজীবী আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, শারমিনের দায়ের করা মামলাটি বিজ্ঞ আদালত গ্রহণ করেছেন। বাদীর জবানবন্দিও নিয়েছেন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুই মাসে তিন খুন: হাটহাজারীর পূর্ব শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে দুই মাসে তিন খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গতবছরের ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মো. আনিস ও তার বন্ধু মাসুদ কায়সার এবং গতবছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও শমসের পাড়ার উর্দুপাড়া এলাকায় তাহসীন নামে এক বালি ও ইট ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা। তিনটি মামলায় সাজ্জাদকে আসামি করা হয়েছে। সহযোগীদের গ্রেপ্তার করার কথা বললেও সাজ্জাদের নাগাল পায়নি পুলিশ।
উল্লেখ্য, বিদেশে পলাতক বহদ্দারহাট আট হত্যা মামলার আসামি ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে এই সাজ্জাদ অপরাধজগতে পা রাখেন। এরপর দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৪টি মামলা রয়েছে। শেষমেশ গতবছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরীর বায়েজিদ থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরীর চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সাজ্জাদ।