অবৈধ ইটভাটার মাটি রাখতে কৃষকের ১৬০০ কলাগাছ কর্তন, ১০ দিনেও মেলেনি প্রতিকার
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
অনুমোদনহীন অবৈধ ইটভাটার জন্য পদ্মা নদীর পার ও কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সেই মাটি স্তূপ করে রাখার জন্য দখল করা হয়েছে ভাটার পাশে থাকা কৃষকের ৩ বিঘা জমি। কেটে ফেলা হয়েছে ওই জমিতে থাকা ১৬০০ ফলন্ত কলাগাছ। প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ১০ দিনেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এই অবস্থায় অবৈধ দখলদার ইটভাটার মালিক ও তার স্বজনদের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মীমাংসা না করলে এলাকা ছাড়ার হুমকিতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী কৃষক মো. হান্নান মোল্লা।
এই ঘটনা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মানিক মোড়ের পদ্মা নদীর তীরবর্তী একটি অবৈধ ইটভাটায়। ভাটাটি স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল মোল্লার। লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কামালপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত ইসলাম মোল্লার ছেলে মো. জহুরুল মোল্লা তাঁর ইটভাটার জন্য পদ্মা নদী থেকে মাটি কাটছেন। প্রতিদিন ৪-৫টি ডাম্প ট্রাকে করে পদ্মা নদী থেকে মাটি এনে জমিতে রাখা হচ্ছে। এই মাটি রাখার জন্য দখল করা হয়েছে প্রতিবেশী মৃত খবির উদ্দিন মোল্লার ছেলে কৃষক হান্নান মোল্লার জমি। জমিটিতে কলা চাষ করা হয়েছিল। কেটে ফেলা হয়েছে দুই হাজার কলাগাছের মধ্যে ১৬০০ গাছ। কলাগাছ সরিয়ে জমিতে স্তূপ করা হচ্ছে মাটি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. হান্নান মোল্লা জানান, জমিটি তিনি স্থানীয় আনিছ বিশ্বাসের কাছ থেকে তিন বছরের জন্য খাজনা নিয়ে চাষ করছিলেন। গত বছর কলাগাছগুলো লাগানো হয়েছিল। এখন এসব কেটে ফেলে জমি দখল করে রাখা হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে জহুরুল মোল্লা, তার ছেলে আল আমিন মোল্লা, মৃত আলম মোল্লার ছেলে মো. নয়ন মোল্লা ও নাইম মোল্লাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৮-১০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে গাছগুলো কেটে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে প্রভাবশালী জহুরুল মোল্লা ও তার লোকজন মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কৃষক হান্নান মোল্লা বলেন, প্রশাসন কোনো সহযোগিতা না করলে বাধ্য হয়ে তাদের শর্তে মীমাংসা করতে হবে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত ইটভাটা মালিক জহুরুল মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। তবে তার ছেলে আল আমিন মোল্লা দাবি করেন, ইটভাটার জন্য জমিটি খুবই প্রয়োজন ছিল এবং বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।