গাজীপুরে মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনায় যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:
গাজীপুরে মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনার ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পথচারীরা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এরিয়ার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর, সালনা, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইল রোডে রাস্তার মাথা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে রয়েছে।
দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও ময়লা আবর্জন আর ফেলার মতো নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্ধারণ করতে পারেনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা এমনকি গার্মেন্টস কর্মীরা দুর্গন্ধে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
গার্মেন্টসকর্মী রাবেয়া জানান, প্রতিদিন সকালে এ রাস্তা দিয়ে তাদের হেঁটে কর্মস্থলে যেতে এবং আসতে হয়। রাস্তার পাশে ফেলা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাক মুখ ধরে তাদেরকে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা বাইমাইল এলাকায় ময়লার পাহাড় জমে আছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছে, তাদের জানা মতে কোথাও এমন নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন নগর নেই। গাজীপুর সিটিতে নির্বাচিত দুইজন মেয়র দুই দফায় দায়িত্ব পাওয়া এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব পালন করার পরও ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন করতে পারেননি। এছাড়া নির্বাচিত দুজন মেয়রের একজনও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে না পারায় আলোর মুখ দেখেনি তাদের নেয়া প্রকল্পগুলো। যে সমস্ত জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে এই ময়লার গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ বছরের পর বছর।
২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক এম এ মান্নান। রাজনৈতিক কারণে তিনি পূর্ণ মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় তাকে যেতে হয় কারাগারে। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে সিটি নির্বাচনে নির্বাচিত হন জায়েদা খাতুন। অল্প সময় দায়িত্ব পালন করার পর ৫ আগস্টের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের বাতিল করা হয়।
পরিবেশবিদ ও নদী গবেষক হুমায়ুন কবির বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নিজেই নদী তথা পরিবেশ দূষণ করছে। খোলা জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলা এসব ময়লার শেষ ঠিকানা নদী ও জলধার। আমরা শুনেছি বর্জ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অনেকগুলো প্রকল্প হবে। কিন্তু ১১ বছরেও কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য তারা শুধু জায়গায়ই খুঁজছেন। গাজীপুরের তরল বর্জ্য তুরাগ নদ, চিলাই নদী, মোগরখাল, হায়দারাবাদ খালসহ আশপাশের সব জলাশয় দূষিত করছে বলে জানান এই পরিবেশবিদ।
তিনি আরো বলেন, নদী ও খালগুলো দূষণমুক্ত রাখার কোনো পদক্ষেপ নেই সিটি কর্পোরেশনের। শুধু তরল বর্জ্য নয়, কঠিন বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে নদী ও খালে। কঠিন বর্জ্যগুলো নদীর তলদেশে চলে যায় বা ভেসে থাকে। আর তরল বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠছে পানি। মরে যাচ্ছে মাছসহ জলজ্য পানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা এলাকায় বর্জ্য ফেলার স্থানটি এখন ময়লার পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন জানান, বাড়ি থেকে ভ্যানে করে ময়লা আবর্জনা নেয়ার জন্য টাকা দিতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের এসব ময়লা নিয়ে কড্ডা এলাকায় ফেলে দেয়া হয়। অনেক সময় দু-তিন দিন পার হয়ে গেলেও বাসা বাড়ি থেকে ময়লা নেয়া হয় না।
গাজীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে রাখা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না। এ কাজে আমরা অনেকটা ব্যর্থ। সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়া হলেও মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়নি।
কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, গাজীপুরে আগে থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল না। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে। মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলার দাবি জানিয়েছেন পথচারী ও সচেতন মহল।