খুলনায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গুলিবিদ্ধ, সাড়ে ৩ মাসে ৮ খুন
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
খুলনা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেএমপি কমিশনারের সংবাদ সম্মেলন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই আরো এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হলেন নগরীতে। নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহিন শেখ (৫০)।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে, একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, হত্যাসহ কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের কারণে উদ্বীগ্ন হয়ে উঠেছে নগরবাসী। গেল সাড়ে তিন মাসে নগরীসহ জেলার নয় উপজেলায় আটটি হত্যাসহ ঘটেছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলো যেমন এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তেমনি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সামনেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারাও নগরীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেছেন।
নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খোদ কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় কেএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন আহবান করেছেন।
কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহা. আহসান হাবীব বলেছেন, রবিবারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে এমন ঘোষণার পরই ঘটলো আরো একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহিন শেখ শনিবার রাত ১০টার দিকে মিস্ত্রিপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে পৌঁছালে ২০-২৫টি মোটরসাইকেলযোগে মুখে মাস্ক পরিহিত ৪০/৫০ জনের একটি অস্ত্রধারী দল আচমকা সেখানে গিয়ে দু’টি গুলি করে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। যার একটি গুলি শাহিনের পিঠ থেকে ঢুকে বুকের সামনে গিয়ে আটকে যায়।
স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ শাহিনকে দ্রুত খুমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাতেই তাকে অ্যাম্বুল্যান্সযোগে ঢাকার উদ্দেশে নেওয়া হয়। শাহীন নগরীর মিস্ত্রিপাড়া খালপার রোডের জনৈক আলি শেখের ছেলে।
সম্প্রতি খুলনার আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। বিগত সাড়ে তিন মাসে নগরীসহ জেলায় আটটি হত্যাকাণ্ডসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের রেকর্ড বলছে।
তাছাড়া খুলনার চরমপন্থীদের পরিকল্পনায় এক কাউন্সিলরকে খুলনা থেকে কক্সবাজারে নিয়ে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাও ঘটেছে গত ৯ জানুয়ারি। কেসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু হত্যাকাণ্ডটি খুলনায় না হলেও গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই খুলনার বাসিন্দা এবং তারা ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে স্বীকার করেছেন পুলিশের কাছে। তবে গ্রেপ্তারকৃত ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টিপু হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না সেটি এখনো পুলিশ নিশ্চিত না হলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অন্যান্য অভিযোগ ও মামলা।
খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি নগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন উদ্বেগ প্রকাশ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী পুলিশি ভূমিকায় ছাত্র-জনতার ক্ষুব্ধতার কারণে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। এজন্য হয়তো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, সন্ত্রাসীদের অপতৎরতা বেড়েছে এটি যেমন ঠিক তেমনি পুলিশি তৎপরতাও থেমে নেই। তবে মাদক বেচাকেনা-সংক্রান্ত বিরোধ এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পুলিশ নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।