বিএনপির ভাবনায় শুধুই ভোট
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভাবনায় এখন শুধুই ভোট। দলটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে সোচ্চার। এই লক্ষ্যে বিএনপি তার সাংগঠনিক শক্তি সংহত করছে। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের নীতি নিয়েছে দলটি। দ্রুত নির্বাচনে বিএনপির দাবির পক্ষে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি চায় অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াহুড়া করে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার না করে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আপাতত সেটুকু সংস্কার করুক। তাঁরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করা হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংকট ক্রমশ বাড়বে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, সেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণ নেই। আর এই সংস্কারকাজ শেষ করে জুলাই মাসের মধ্যেই ভোট করা সম্ভব। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র মনে করে, যারা একসময় মাইনাস টু-এর ষড়যন্ত্রে ছিল, তারা এখনো তৎপর। এবার তাদের টার্গেট বিএনপিকে মাইনাস করা। সে কারণে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় এনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণ অধিকার ফিরিয়ে দেবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকারের অহেতুক সময় নষ্ট করা উচিত হবে না।
বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছেন তাঁরা। এ জন্য সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপও দাবি করে আসছেন। এবার খোলাখুলিভাবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁরা বলছেন, তাঁদের সব সাংগঠনিক কর্মকান্ড এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগপর্যন্ত নেতা-কর্মীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে মাঠে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সরব থাকবে দলটি। কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের আদর্শ, নীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রচারের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩১ দফা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন। এভাবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখতে চায় দলটি
বিএনপি নেতৃত্ব মনে করেন, এক-এগারোর সময় ক্ষমতাসীনরা দুই নেত্রীকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) মাইনাস করতে কিংস পার্টি গঠন করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। এবারও সে রকম চক্রান্ত থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি চাইছে সম্ভাব্য কিংস পার্টি গঠনের আগেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। রোডম্যাপ ঘোষণা হলে সব দল নির্বাচনি কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে যাবে। ফলে এক-এগারোর ভয় অনেকটাই কেটে যাবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন তাঁরা। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়। তবে এখনো স্বস্তি মিলছে না। একটি মহল একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে নির্বাচনকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতেও শুরু হয়েছে নানামুখী তৎপরতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর ভর করে একের পর এক ইস্যু সৃষ্টির পেছনে এ মহলটির হাত রয়েছে। বিএনপি নেতারা জানান, সংস্কারে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। অভ্যুত্থানের দুই বছর আগে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা দিয়েছে। ওই সংস্কারের মাধ্যমেই দেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, তার সবগুলোই ওই ৩১ দফাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কারকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারকে বলছে বিএনপি। বিএনপির ভাবনায় ভোট ছাড়া অন্য কিছুই নেই।