বাগেরহাটে বে-আইনীভাবে গড়ে উঠেছে এলপিজি তরল গ্যাসের সিলিন্ডার কাটার কারখানা
বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় বে-আইনীভাবে এলপিজি তরল গ্যাসের সিলিন্ডার কেটে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে একটি অসাধু চক্র। এ খবর জানতে পেরে গত ১৫ জানুয়ারি বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া এলাকায় এ কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় কয়েকটি এলপিজি গ্যাস কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থ্রি স্টার এলপিজি’র পরিবেশক মালিক কালু মিয়াকে আটক করে। তবে আটক কালু মিয়া গ্যাস সিলিন্ডার কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেন। অবৈধ এ কারখানা থেকে ৪ শাতধিক কেটে ফেলা গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করে পুলিশে কাছে হস্তান্তর করে তারা। অবৈধভাবে এসব কোম্পানির সিলিন্ডার কেটে বিক্রি করায় এলপিজি ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে আশংকা তাদের। তাই যারা অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কাটার ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। এই ধরনের অপরাধ যাতে ভবিষ্যতে না হয় সে জন্য পুলিশ নজরদারি রাখবে। মেঘনা ফ্রেস এলপিজি লিমিটেডের খুলনা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপনন) এমডি আল আমিন খান অভিযোগ করে বলেন, ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তি কয়েক বছর আগে থ্রি স্টার নাম ব্যবহার করে কয়েকটি এলপিজি কোম্পানির ডিলারশীপ নেন। অথচ গত ৩/৪ বছর ধরে তার সঙ্গে কোন কোম্পানির ব্যবসা নেই। আমরা জানতে পারি এইখানে গ্যাসের সিলিন্ডার কেটে তা বাইরে বিক্রি করে দেয়া হয়। সেই তথ্য অনুযায়ি আমরা সবাই মিলে এখানে এসে গেট বন্ধ দেখতে পাই। ভিতরে ঢুকতে চাইলে তারা আমাদের কোন সহযোগিতা না করায় পরে পুলিশের সহযোগিতায় ভিতরে ঢুকি। ভিতরে ঢুকে দেখি অসংখ্য সিলিন্ডার কেটে ট্রাকে বোঝাই করা। গ্যাস সিলিন্ডার ১৯৯১ এর বিধিমালার বিষ্ফোরক আইন অনুযায়ি সিলিন্ডার কেটে ফেলা বা আকৃতির পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। একমাত্র স্ব স্ব কোম্পানিই পারবে। তারা আইন অমান্য করে এখানে নিয়মিত অবৈধ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কাটা হলে এখানে বিষ্ফোরণ ঘটে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকাও রয়েছে। এখানে এই অবৈধ যে কাজ হচ্ছে তা আমরা পুলিশসহ আমাদের কোম্পানির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এই প্রক্রিয়াকরণ কারখানার একজন মালিককে আমরা হানেনাতে ধরে পুলিশে দেই এবং একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই কর্মকর্তা। এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপনন) এমডি তারেক সিদ্দিকীর অভিযোগ, ২০১৭ সালে আমাদের কোম্পানির ডিলারশীপ দেয়া হয় থ্রি স্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রায় পাঁচ বছর আগে তাদের সাথে আমাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। এর আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানটি সিলিন্ডার কেটে বাইরে বিক্রি করছে। আমরা এখানে এসে দেখি অসংখ্য গ্যাসের সিলিন্ডার কেটে রাখা। এর অধিকাংশই এনার্জিপ্যাকের। বিপুল পরিমান বিনিয়োগ করে একটা এলপিজি কোম্পানি গড়ে ওঠে। থ্রি স্টার এলপিজি’র মালিক কালু মিয়া গ্যাস সিলিন্ডার কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লোকসানের মূখে পড়ে এখন আমি গ্যাসের ব্যবসা করি। আমার ব্যাংক ঋণে আছি। আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি। সময় মত টাকা পরিশোধ না করলে মামলা হবে আমার বিরুদ্ধে। এখানে অল্প কিছু সিলিন্ডার যা ছিল তা আমি ভংগাড়ি ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এই কারাখানটি এখন ভংগাড়ি ব্যবসায়িদের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। তারা সিলিন্ডার কাটে না কি করে তা আমার জানা নেই। ফকিরহাট থানার ওসি এস এম আলমগীর কবীর বলেন, অভিযোগ পেয়ে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেই। তিনি সেখানে যেয়ে পিকআপ ভর্তি ও রাস্তার পাশে গ্যাসের কাটা সিলিন্ডার পায়। সিলিন্ডারগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। তাদের অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে সিলিন্ডার কেউ কাটতে পারবে না। আমরা এখন থেকে নজরদারিতে রাখব।